Published Paper Details:

SATATRUTU PATRIKAR DUJAN GOLPOKAR : ANUBARTAN.

JAYASREE GHOSH 

শতক্রতু পত্রিকা, অনিশ, সাহিত্য অনীশ্বর, প্রতিস্রোত, সর্পিল, উন্মোচন, অঙ্গীকার

বরাক উপত্যকার সাহিত্যে আধুনিকতার জোয়ার নিয়ে এসেছিল স্বপ্নিল, অতন্দ্রেরা কাব্যের জগতে, আর গদ্যের ক্ষেত্রে ‘সম্ভার’, ‘অনিশ’, ‘শতক্রতু’, ‘সাহিত্য অনীশ্বর’, ‘প্রতিস্রোত’, ‘সর্পিল’, ‘উন্মোচন’, ‘অঙ্গীকার’ প্রভৃতি।

         বরাক উপত্যকার সাহিত্যের পঞ্চাশের দশকের অধিকাংশ ছোট পত্রিকাই ছিল কবিতা পত্রিকা। ১৯৫৭ সালের পূজোয় ‘সম্ভার’ পত্রিকার প্রকাশ ঘটিয়ে সম্পাদকদ্বয় অমিত কুমার নাগ ও অতীন্দ্রমোহন গুপ্ত কবিতার সঙ্গে গল্প, প্রবন্ধ চলচ্চিত্রকেও স্থান দিলেন। এ অঞ্চলে বাংলা ছোটো রচনার ইতিহাস মোটামুটিভাবে তখন থেকেই শুরু। শক্তিশালী তরুণ লেখকেরা ‘সম্ভারে’ বহুসংখ্যক গল্প লিখেছেন। তবে কোনো গল্প আন্দোলন ‘সম্ভার’কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। গোষ্ঠীচেতনা গড়ে তোলার কোনো প্রয়াসও সম্পাদকের ছিল না বললেই চলে। তবে কিছু কিছু গল্প ও গল্পকার উল্লেখের দাবি রাখেন। 

         শতক্রতুর বিভিন্ন সংখ্যায় বরাক উপত্যকার ইতিহাসকে যদি কেউ খুঁজে দেখতে চান, তাহলে তিনি হয়তো এক খণ্ড কালের নানা বৈশিষ্টের সঙ্গে পরিচিত হবেন। এই পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় যে লেখাগুলো ছাপা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে আসলে সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানুষের সম্পর্কের নকশি কাঁথার পরিচয় পাওয়া যায়। গল্প তো অবশ্যই এই কাগজের প্রধান একমাত্র অ্যাজেণ্ডা ছিল, তবে কবিতা এবং প্রবন্ধের মধ্য দিয়েও ‘শতক্রতু’ ভিন্ন মেজাজের পরিচয় দিয়েছে।

         ষাটের দশক পেরিয়ে শত্তরে এসে কিছুটা বিলম্বিত হয়েই বৃহত্তর বঙ্গ সাহিত্যের ছোঁয়া এসে লাগল বরাক উপত্যকায়। ষাটের প্রজন্মের মুখপত্র রূপেই আত্মপ্রকাশ ঘটল ‘শতক্রতু’র। কতিপয় তরুণ গল্পকার মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ-মাধ্যম খুঁজে পেলেন এ অঞ্চলের ছোটো গল্পে। ‘শতক্রতু’র প্রস্তাবনা সংখ্যায় শেখর দাশ, মিথিলেশ ভট্টাচার্য নূতন আঙ্গিকে চমকে দিলেন অভ্যস্ত পাঠক সমাজকে। শেখর দাশের ‘ক্রমশ তাপ’ গল্পটি উত্তাপ সৃষ্টি করল পাঠক মানসে। কেউ বা রেগে জ্বলে উঠলেন আবার কেউ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আশ্বস্ত হলেন-- না বরাক উপত্যকার গল্পে সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত আজ আভাসিত হচ্ছে। কাছাড়ের আর দশটা সাহিত্য পত্রিকার মতো ‘শতক্রতু’ যথানিয়মে প্রথম সংখ্যা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি, কিছু ধরনের হৈ হৈ গদ্য পদ্য আর তুলকালাম কাণ্ড করতে করতে শতক্রতু এগিয়ে চললে কোমরে ধুতির বদলে গামছা কষেঃ। তাদের এই দুঃসাহস অদূর ভবিষ্যতে কাছাড়ে একটি সত্যিকারের সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তোলে। এমনি করে আটটি বছর কাটিয়ে দিল শতক্রতু শত দুঃখ কষ্টে অর্থের অনটনকে হৃদয়ে গোপন রেখে কেবলমাত্র তারুণ্যের আবেগে উন্মাদনায় নূতন অন্বেষণের অভিপ্রায়ে।

         শতক্রতুর গল্পকাররা হলেন শেখর দাশ, মিথিলেশ ভট্টাচার্য, তপোধীর ভট্টাচার্য, রণবীর পুরকায়স্থ, করুণাকান্তি দাশ, অনুশ্রী সেন, দিলীপ কুমার পাল, মিহির কান্তি রায়, শিবব্রত ভট্টাচার্য, অরিজিৎ চৌধুরী, আশুতোষ দাস, মৃন্ময় রায়, দুলাল ঘোষ, শিরীষ দে, শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী, আশিষ পুরকায়স্থ, জয়ন্তী বসু, সমরজিৎ সিন্হা, অজিৎ কর, কৃষ্ণা মিশ্র, বিজয় দেবরায়, পীযূষ রাউত, অমলেন্দু ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী ঘোষ প্রমুখ।

         ‘শতক্রতু’ যে বাংলা গল্প রচনায় উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি রচনা করেছে, তারমূলে রয়েছে ভাষা ও ভাবের দূরন্ত আধুনিকতা এবং গল্প দেহসজ্জায় অর্থাৎ আঙ্গিকে বিচিত্র ও বহুমুখী পরীক্ষা নিরীক্ষা।

         শেষ কথা তবুও বলতে হয়, আমাদের এ অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিকদের অনেকটাই ছোটো পত্রিকার পাতায় বন্দী। ‘ছেটো পত্রিকা’ বা ‘লিটিল ম্যাগাজিন’ প্রকৃতপক্ষে বরাক উপত্যকার সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার একমাত্র বিশল্যকরণী।’ এই মৃত সঞ্জীবনী সুধা নিয়েই আজ আমরা বরাক উপত্যকার সাহিত্যের অমৃত রসমাধুর্যকে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি এবং রসসুধা আস্বাদনে প্রয়াসী হয়েছি। এখনও বরাক উপত্যকার সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অনালোচিত রয়ে গেছে। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির বহু উপাদান এখনও পুঁথির পাতায় লুকিয়ে আছে। সে সমস্ত সোনার খনিতে খনন কার্য চালারার সময় আজ উপস্থিত।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID :  tirj/ October 22/article-8

Page No : 56-73

Published In :Volume 2, Issue 4

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License