Published Paper Details:

 Galpokar Premendra Mitrer Nirbachita Galpe Nagarik Chetanar Unmachan.

Subarna Sen     

বিশ্বযুদ্ধ সমকালীন প্রেক্ষাপট, আধুনিক জীবন, নাগরিক চৈতন্য, ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ ও তার বাস্তব প্রতিচিত্র

রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা কথাসাহিত্যে দিক পরিবর্তনকারী এক ক্রান্তিকালের বাণীশিল্পী প্রেমেন্দ্র মিত্র। জীবনের শত সহস্র আশাভঙ্গের কাহিনী, রিক্ত হৃদয়ের দীর্ণতা, একটি প্রাণস্পন্দনের আশ্চর্য উদ্ভাসন, জীবন প্রত্যয় থেকে একপ্রকার আশাবাদী মন সব মিলিয়ে তাঁর সাহিত্যের শিল্পরীতি ও অর্থনৈতিক সংকট ও সমাজ পরিবর্তনের কালচক্রে উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্ত নাগরিক জীবনের হাহাকার, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তির দোলাচলতা এমন নৈপুণ্যে বিশ্লেষিত হয়েছে, যা আলোচ্য প্রবন্ধে আলোকপাত করার চেস্টা করা হয়েছে।

এই নাগরিক চেতনায় তিনি ‘ছোট সুখ ছোট ব্যাথা’র যে তত্ত্ব সেই দ্বান্দ্বিকতাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল, কখনো সাংসারিক রোমান্টিকতার ক্ষুদ্র পরিসরে পৃথক স্বাতন্ত্র‍্যে ব্যাখ্যায়িত করেছেন। একদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামাজিক গতিশীলতা, শ্রমের বিভাজন প্রেমেন্দ্র মিত্রের বহু লেখনীকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাবাদ, বানিজ্য সম্প্রসারণ, নগর সৃষ্টি বা আধুনিক নগরায়ণের ধ্যান-ধারণা গড়ে উঠতে থাকে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে বিশ শতকের তিরিশের দশক থেকে বাংলা সাহিত্যে শহরের কথা ১৯২৯ এ প্রকাশিত ‘পথের পাঁচালী’, ১৯৩১ এ প্রকাশিত ‘চৈতালি ঘূর্ণি’, ১৯৩৬ এ প্রকাশিত ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র মতো কালজয়ী উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে নাগরিক চেতনা নানা আঙ্গিকে সঞ্জাত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনব্যাবস্থার পরিশীলিত রুচির আগমন, আত্মপরিচয়ের সংকট নাগরিক চেতনার রঙে রঞ্জিত হয়েছে লেখকের কালজয়ী সৃষ্টিতে।

প্রেমেন্দ্র মিত্র মধ্যবিত্ত জীবনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই নাগরিক চেতনা ও মহানগরের সংকট, যান্ত্রিকতা, মনস্তাত্ত্বিকতা, শিকড় থেজে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সূত্রপাত, অর্থনৈতিক শোষণের কাছে বিকৃত মনুষ্যত্ব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব অর্থনৈতিক অধঃপতন অত্যন্ত সূচারুভাবে বর্ণিত হতে দেখা গেছে। এরই মাঝে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষের স্বপ্ন, আশা, কল্পনা, জেগে থাকে। মহানগরে যন্ত্রের নির্মোঘ যেমন সত্যি, তেমনি মানুষের উৎসাহ জেগে থাকাও সত্যি, এই দুটি চিত্রই এখানে লেখক অত্যন্ত মর্মস্পর্শী আবেদনে প্রকাশ করেছেন। মহানগরের যান্ত্রিক কলরব, জটিলতা, আলোকোজ্জ্বল জাঁক-জমক, মানুষের বিবেক বুদ্ধি, অদম্য উৎসাহ মধ্যবিত্ত জীবনের কথাকার রূপে তাই লেখক জানিয়েছেন, যেন পাঠক দর্শক তাঁর সঙ্গেই নগর জীবনকে প্রত্যক্ষ করতে করতে এগিয়ে চলুক, যে মহানগরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আকাশের তলায় পৃথিবীর মতো অজস্র ক্ষত, আবার যে মহানগর কখনো উঠেছে মিনারে, মন্দিরের চূড়ায়, আর অভ্রভেদী প্রাসাদ শিখরে তারাদের দিকে, প্রার্থনা মতো মানবাত্মার। তিনি তাই তাঁর সাহিত্যিক ধ্যান-ধারণার মধ্যে একদিকে মানুষ ও অন্যদিকে নগরকে উপজীব্য করেছেন। মধ্যবিত্তের সংকটে যেখানে রোমান্টিকতা ক্ষুদ্র বিলাসিতা মাত্র, তবুও সেখানে মানুষ বেঁচে থাকার আশা ছাড়েনা। এই ভাবনাই ‘পুন্নাম’, ‘শুধু কেরানী’, ‘হয়তো’, ‘মহানগর’, ‘সংসার সীমান্তে’ প্রভৃতি গল্পে নগর সভ্যতার ভিত্তিভূমি রচনা করেছে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/April21/article-4

Page No :  25 – 31

Published In :Volume 1, Issue 2, April 2021

DOI (Digital Object Identifier) : http://doi.one/10.1750/TIRJ.30518

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License