Published Paper Details:

 PURULIAR TUSHU GAN: NARIR ANTARBEDANA.

SANJAY KUMAR  

টুসু, নারী, পুরুলিয়া, টুসুগান, মর্মযন্ত্রনা, বাল্যবিবাহ, অত্যাচার, বালিকা, শ্বশুর

পুরুলিয়া জেলার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় লোকসংগীত হল টুসুগান। সাধারণত “টুসুপার্বন” বা মকর- পরবকে কেন্দ্র করে এই টুসুগান গাওয়া হলেও বছরের অন্যান্য সময় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সঙ্গে এই জেলার নারীরা গুনগুন করে টুসুগান গায়। টুসু সাধারণত নারীদের উৎসব। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিনে পাড়ার কোনো একজনের বাড়িতে টুসুপাতা হয়। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত সন্ধ্যার সময় পাড়ার বালিকা-যুবতী-বৃদ্ধা সকলে একত্রিত হয়ে গান গায়। তাদের গানের বিষয় তাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।

বালিকা বয়স থেকে বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নারীকে কত রকমের সামাজিক নিয়মকানুন, বিধিনিষেধ, ও কুপ্রথার সঙ্গে লড়াই করে জীবন যাপন করতে হয়  তার‌ই মর্মান্তিক ছবি এই টুসুগানে ফুটে উঠতে দেখা যায়। বাল্য বিবাহ নারীসমাজে প্র- চলিত একটি অন্যতম সামাজিক ব্যধি, একটা দশ-বারো বছর বয়সী নারী বিবাহের পর শ্বশুরবাড়িতে যায় সেখানে কাজকর্ম করতে পারে না বলে শাশুড়ি-ননদের কাছ গালিগালাজ খেতে হয় তাকে। আমরা টুসুগানে পায়: 

১। শাশুড়ি ননদী বড় কাল দেয় না দু মুঠা ভাত।

খাট্যে খাট্যে জীবন গেল হল্য রোগ বাত।

 

২। টুসু হামার ছুটু ছ্যালা শ্বশুর ঘরের বড় কলসী কাঁখে লিতে লারে গ।

বাঁধের ঘাটে কলসী রাখ্যে পালাঁয় আল্য বাপের ঘরে গ।

 

৩। কলঙ্কাটির জবা ফুলটি হলুদ বল্যে বাটেছি

ও শাশুড়ি গাল দিও না পাশা খেইলতে বস্যেছি।

এইরকম অবস্থা হয় নারীদের। সেই সঙ্গে সংসারের অভাবের সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয়। এই সাংসারিক অভাব এমন আকার ধারণ করে যে অনেক সময়―

১। হামার বাপে মায়ে বিহা দিল

বড় শ্বশুর ঘর দেখ্যে।

হামার জনম গেল মাড়ভাত খাত্যে

কাল কাটাব কেমনেতে।।

 

২। জনম দুঃখিনী মা গ হামি।

দু বেলা পেটে পড়ে না মাড়পনি।।

কাল যাব আড়শা হাটে।

শাল পাতা বিকব হাটে হাটে।।

খুবই মর্মান্তিক এই দৃশ্য। যেখানে দুবেলা আহার টুকুও ঠিকঠাক জোটে না। 

           মেয়েকে বালিকা বয়সে বিয়ে না দিলেও নানা গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। আবার বিয়ে দিতে গিয়ে পণের দায়ে বাবা মাকে সর্বশান্ত হতে হয়। ফলে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও মেয়ের মনে একটা গ্লানি থেকেই যায়, আবার সেখানেও সুখ নেই; স্বামীরঘরে নিত্য অভাব-অনটন,শাশুড়ি-ননদের সঙ্গে কলহ। অনেক নারী শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আবা- র বাপের বাড়িতে ফিরে আসে। আমাদের আলোচ্য টুসুগানে এই বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সংসারে নিত্য অভাব থাকার জন্য এই জেলার নারীদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। এককথায় বলা যায় যে এই অঞ্চলের নারীকণ্ঠের বিখ্যাত লোকগান টুসু, যা একজন নারীর বালিকা বয়স থেকে বৃদ্ধা অবস্থায় পৌছানোর মাঝখানে যে সমস্ত সামাজিক কুপ্রথা, কুসংসার, অন্যায়, অনাচার সহ্য করতে হয় তার‌ই অলিখিত ইতিহাস। নানা ধরনের সামাজিক অনুশাসনের ভয়ে নারীরা তাদের উপর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম- কানুন ও বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের কথা সরাসরি ব্যক্ত করতে না পারলেও আজন্ম লালিত তাদের এই টুসুগানের মাধ্যমে সেই অব্যক্ত মর্মযন্ত্রনার প্রকাশ ঘটে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/April/22/article-19

Page No : 151 – 157

Published In :Volume 2, Issue 2, April 2022

DOI (Digital Object Identifier) : http://doi.one/10.1750/TIRJ.30429

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License