Published Paper Details:

 DILARA HASEMER UPONNYASH AMLOKIR MOU: JIBON JEKHANE JUDDHYA.

Dr. ANUPAM SARKAR  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, নারী কেন্দ্রিকতা, নারী জীবন 

‘আমলকীর মৌ’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই লেখা একটি উপন্যাস। চরম অস্থির রাজনৈতিক অবস্থার সময়কালে উপন্যাসটি রচিত। তবে এর পটভূমি রাজনীতি নয়। রাজনীতি অর্থনীতি যেমন জনজীবনকে জড়িয়ে রাখে তেমন এ উপন্যাসেও অনিবার্যভাবে রাজনীতি এসেছে। তবে ঔপন্যাসিক দিলারা হাশেম চেষ্টা করেছেন কৌশলে ঐ সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে সামাজিক-পারিবারিক জীবনকে উপজীব্য করে তুলতে। তবু চেষ্টা করলেও পুরোপুরি এড়াতে পারেননি। যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে যারা নিশ্চিন্ত ছিলেন তারা কিছুটা নাড়া খান এ উপন্যাসের বিষয়বস্তুতে। লেখক তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন দেশমুক্তির যুদ্ধ শেষ হয়েছে, নারী স্বাধীনতার যুদ্ধের মিমাংসা হয়নি। অর্জিত হয়নি মানবতার মুক্তি। সে যুদ্ধ চলমান। দেশ স্বাধীন হলো। নারী স্বাধীন হলো না। মুক্ত আর উদার হলো না সমাজের বোধ-বুদ্ধি মানসিকতা। তাই লেখকের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায়। এসব প্রশ্ন নিয়েই হাজির হলো ‘আমলকীর মৌ’। দিলারা হাশেম উপন্যাসে সৃষ্ট কিছু চরিত্রের মাধ্যমে দেখিয়ে দিলেন, পুরুষের সৃষ্ট মূল্যবোধ নিয়ম-নীতি, আইন-কানুনে আপাদমস্তক জিম্মি নারীরা। এ সমাজ ব্যবস্থা নারীবান্ধব নয় বরং মারাত্মক প্রতিবন্ধক। জিম্মি একশ্রেণির পুরুষও। যাদের টাকা নেই, হাতে ক্ষমতা নেই। যুদ্ধ পরবর্তীকালে ক্ষমতা আর টাকা তাদের হাতেই এসেছিল যারা রাজনীতি করতেন, রাজনীতির সাথে ছিলেন। তাই উপন্যাস থেকে মোটেও রাজনীতিকে বাদ দেয়া গেল না। ‘আমলকীর মৌ’ চরমভাবে রাজনৈতিক একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসে একজন নারী গেরিলা যোদ্ধার মতো জীবনযুদ্ধ করেছেন। সেই যুদ্ধকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। সে যুদ্ধ বিশাল।

        ‘আমলকির মৌ’ নারীকেন্দ্রীক উপন্যাস। নারীকেন্দ্রীক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে আরও অনেক লেখা হয়েছে। তবে এরকম সাহসী উপন্যাসের সংখ্যা খুবই কম। সত্তর দশকে মধ্যবিত্ত পরিবারের এক নারী স্বামী-সন্তান ছেড়ে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে বাস করছে। রাত নেই দিন নেই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে হলে পান করছে তরল কিংবা ধূম। ব্যাচেলর বন্ধুর ফ্লাটে ঢুকে পড়ছে যখন তখন এমন একটা চরিত্র এঁকেছেন লেখক। সত্তর দশক কেন, এসব ভাবতে এখনও অনেক মেয়ের গা শিউরে উঠবে। আমাদের প্রচলিত মননে একজন বিবাহিত নারীর জীবন যেমন হওয়ার কথা তা উচ্চবিত্ত হোক বা নিম্নবিত্ত তার সাথে সারার জীবন মেলে না। তা যতই উচ্চশিক্ষিত আর আত্মবিশ্বাসী হোক না কেন। একই সাথে এটাও ঠিক সারার মতো আত্মসচেতন, আত্মবিশ্বাসী, বুদ্ধিমতী ও উচ্চশিক্ষিত, চমৎকার ইংরেজি বলা নারী চরিত্রও বাংলাসাহিত্যে খুব বেশি নেই। সারা রূপসী ও বিদূষী। এই রূপগুণই তার কাল হয়েছে নিজের জন্য, অন্যের জন্যও। নারী রূপসী হবে ঠিক আছে। কিন্তু নারীর গুণ থাকা যে পুরুষালি! যে গুণ শুধু পুরুষেরই থাকার কথা তা নারীর থাকবে কেন? এটা সারার দোষ। সারা যোগ্য। তার আচরণ যোগ্য মানুষের মতো। সে পুরোনো জংধরা নারীবিদ্বেষী সমাজকে ভেঙ্গে নতুন করে গড়তে চেয়েছে। সম্পূর্ণ না পারলেও সমাজের কিছু মানুষকে অন্তত সে বুঝাতে পেরেছে, এভাবেও নারীরা বেঁচে থাকতে পারে। এবং এভাবেই বেঁচে থাকা উচিত।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/April/22/article-24

Page No : 196 – 203

Published In :Volume 2, Issue 2, April 2022

DOI (Digital Object Identifier) : http://doi.one/10.1750/TIRJ.30434

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License