Published Paper Details:
CHANDI MANGOL: DUI BIPORIT SAMAJER SARTHAK PRARTIFALAN.
ANINDITA CHATTERJEE
সমাজ, বৈপরীত্য, কালকেতু, ফুল্লরা, দেবী চণ্ডিকা, ধনপতি, খুল্লনা, দারিদ্র্য
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রধান ও অন্যতম শাখা মঙ্গলকাব্যে দেবদেবীদের মাহাত্ম্য কীর্তন করাই কবিদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এখানে মানব মনের প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস আভাসিত হয়েছে। যে ধর্মবিশ্বাস আবার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ভয় থেকে। সভ্যতার আদিপর্বে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তি এবং হিংস্র জন্তুদের ভয় পেয়েছে, খুঁজেছে পরিত্রাণের উপায়। এই ভয় থেকেই দেবদেবীর নানারূপ মানুষ কল্পনা করেছে, চেষ্টা করেছে তাকে তুষ্ট ও প্রসন্ন করে জীবন অস্তিত্বের প্রবহমান ধারাকে নির্বিঘ্ন করতে। এই তুষ্ট করার কাহিনি দেবদেবীদের মাহাত্ম্যরূপে প্রচার করতে চেয়েছে। পৌরাণিক পরিকাঠামোকে অবলম্বন করে মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আনন্দ নিয়ে যে দৈনন্দিন জীবন তারই প্রকাশ ঘটেছে। সেই সূত্রে সমাজ ও সামাজিক বৈপরীত্য মঙ্গলকাব্যে বিশেষত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে দু’ই বিপরীত সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে।
কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের ‘আখেটিক খণ্ডে’ বর্ণিত সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে ঐ একই কাব্যে ‘বণিক খণ্ডে’ বর্ণিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তর পার্থক্য বিন্যস্ত হয়েছে। দরিদ্র ব্যাধজীবনের সঙ্গে ধনী বণিকদের জীবনযাপন একরকমের হবে না এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এই বৈপরীত্য ‘চণ্ডীমঙ্গল’ পূর্ববর্তী মঙ্গলকাব্য ধারায় এতটা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েনি। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে দুইখণ্ডের দুই সামাজিক ভিন্নস্তরের দীর্ঘ বর্ণনার মধ্যে কবির জীবন অভিজ্ঞতার স্পষ্ট প্রভাব না থাকলেও কিছু কিছু রূপকের মাধ্যমে নিজ জীবন অভিজ্ঞতার পরোক্ষ প্রভাব নিপুণ দক্ষতায় তাঁর রচনার মধ্যে নিবিষ্ট করেছেন। যা কাব্যরচনার ক্ষেত্রে এক ভিন্ন মধ্যযুগীয় সমাজপ্রেক্ষিতের নবনির্মাণ।
কাহিনি বিস্তারে মুকুন্দ চক্রবর্তী সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি সরূপ দেবীর কাছে পশুদের দুঃখ নিবেদন, দেবীর অভয় প্রদান, দেবীর পরিকল্পনায় অরণ্যের পশুশূন্যতা, অন্নাভাব ক্লিষ্ট কালকেতুর দুশ্চিন্তা, খেদ, অভাবের সংসার পরিচালিকারূপে ফুল্লরার খেদ, শ্রমের বিনিময়ে ধনলাভের ঘটনা এবং স্থান পেয়েছে কালকেতুর চরিত্র বিশ্লেষণ। এখানে চরিত্র বিশ্লেষণ অপ্রাসঙ্গিক হলেও তার বাল্যক্রীড়া, কালকেতু – ফুল্লরার সংসার চিত্র বর্ণনায় দরিদ্র ব্যাধ সমাজের নানা সমস্যা ও যন্ত্রণার কথা এখানে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। ফুল্লরার বারমাস্যার নিদারুণ অভাবের চিত্র আলোচনাও মর্মস্পর্শী।
দ্বিতীয় খণ্ড অর্থাৎ ‘বণিক খণ্ড’ র কাহিনি শুরু হয়েছে ‘চতুর্থ দিবসে’র নিশা পর্যায়ে। ‘বণিক খণ্ডে’ বণিকরা ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বারা ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি করেছে। নিজের দেশকেও সমৃদ্ধ করেছে। ‘বণিক খণ্ডে’ ব্যবসা বাণিজ্যের বর্ণনা, ধনপতির বিলাসী অবকাশ যাপন, ধনপতির ও খুল্লনার বিবাহ, সুশীলার বারোমাস্যা, শ্রীপতির দ্বিতীয় বিবাহ সর্বত্র স্থান পেয়েছে বিলাস ও প্রাচুর্যের চিহ্ন।
দু’ই খণ্ডের সমাজপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। দু’ই বিপরীতধর্মী সমাজ সার্থকভাবে দু’টি খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখনীতে। কবি তার অন্তর্দৃষ্টি, গভীর পর্যবেক্ষণ ও অসাধারণ পরিমিত বোধের দ্বারা বৈপরীত্য, বৈষম্যকেও সমতায় গেঁথেছেন। তাই কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্য ধারায় ভিন্নধর্মী সার্থক সৃষ্টি রূপে বৈপরীত্যের সমতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/April/22/article-25
Page No : 204 – 214
Published In :Volume 2, Issue 2, April 2022
DOI (Digital Object Identifier) : http://doi.one/10.1750/TIRJ.30435
E ISSN : 2583-0848
Creative Commons Attribution 4.0 International License
Article link : https://tirj.org.in/volume-02-issue-02-april-2022/
Article Download link : https://tirj.org.in/wp-content/uploads/2022/04/Chandi-Mangak-tirj-25.pdf