Published Paper Details:

BANGLA UPANNYASHE SAMAJ CHETANA O DESHATMABODHER UNISH-BISH : PRASANGA ‘DEBI CHAUDHURANI’ O ‘CHILEKOTHER SEPAI’.

DR. ARUN SARKAR

সমাজচেতনা, দেশাত্মবোধ, হিন্দু, মুসলমান, প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন, অনুশীলন তত্ত্ব, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তি, ছয়দফা

বাংলা উপন্যাসের মূল বিষয় জীবন সম্পর্কে গভীর জীবনবোধ ও জীবনের সমগ্র রূপের সন্ধান। উনিশ শতকে বাংলা উপন্যাসে সমাজ চেতনা ও দেশাত্মবোধ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিশ শতকেও তার পার্থক্য খুব একটা ঘটেনি। ১৮৮৪-তে প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরানী’ এবং ১৯৮৬ তে প্রকাশিত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাস দুটির প্রকাশের ব্যবধান ১০২ বছর। এই উপন্যাস দুটিতে ব্যক্তির ও সমষ্টির সমাজ চেতনা ও দেশাত্মবোধের মাত্রাগত বৈচিত্র্য থাকলেও গুণগত চরিত্র একই।  

            উনিশ শতক ও বিশ শতকের উপন্যাসে ঔপন্যাসিকগণ এ দুটিকেই তাঁদের উপন্যাসের প্রধান বিষয় করে তুলেছেন। ‘দেবী চৌধুরানী’র প্রেক্ষাপট এক মহাযুগের সন্ধিস্থল। মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ও ব্রিটিশ শাসনের পূর্বাবস্থা। বাংলা তথা ভারত অবিভক্ত। ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর প্রেক্ষাপট (বাংলা তথা ভারত বিভক্ত) ১৯৬৯ সাল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গণঅভ্যুত্থানের কাল। মানুষের একটাই দাবি ‘মুক্তি’, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা৷ ‘দেবী চৌধুরানী’তে রয়েছে হিন্দু-ব্রাহ্মণ সমাজ। ধনী ও দরিদ্র প্রধানত দুটি শ্রেণি। প্রফুল্ল ও তার মা অনাহারে-উপবাসে কাটায় আর প্রফুল্লর শ্বশুর হরবল্লভবাবু জমিদার। মা প্রফুল্লকে বিয়ে দিতে গিয়ে সর্বস্ব ত্যাগ ক’রে অন্নের কাঙ্গালে পরিণত। বাঙালি সমাজের চিরকালীন এই রীতি। প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণে বৈপরীত্য থাকায় প্রফুল্লর মাকে কুলটা, জাতিভ্রষ্টা বলে প্রতিবেশীরা রটায় কারণ বাঙালি গরীব হলেও জাতই তাদের সম্বল। অথচ প্রফুল্লর মায়ের মৃত্যু হলে তার সৎকার করে, শ্রাদ্ধ ও ব্রাহ্মণ ভোজন-এর ব্যবস্থা করে এই প্রতিবেশীরাই। উপন্যাসে হিন্দু বিধবাদের দুর্গতি, বহুবিবাহ, চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট, পিতা-পুত্রের, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, ডাকাতির প্রকোপ ইত্যাদি সমাজ সচেতনতার নানান বর্ণনা আছে ৷ অন্যদিকে, অনুশীলন দ্বারা কীভাবে স্বদেশের ‘মুক্তি’ সাধন সম্ভব তারও সন্ধান রয়েছে। ভবানী পাঠক স্বদেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। ডাকাতিতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। ধনীর ধন লুঠ ক’রে গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার সার্থকতা তিনি জানেন। অনুশীলন তত্ত্বের দ্বারা ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য প্রশমিত ক’রে স্বাধীন মত ও চিন্তাকে নির্জীব ক'রে চরম আত্মত্যাগ ও দেশ সেবার পথেই দেশাত্মবোধ সার্থক হতে পারে, এই ছিল ভবানী পাঠকের ধারণা। দেশপ্রীতিই এই উপন্যাসের মূল সূত্র৷ ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এ রয়েছে প্রধানত বাঙালি মুসলমান সমাজ। শহুরে শিক্ষিত ও গ্রামীণ অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত-চাকুরে-ব্যবসায়ী-কৃষক-জোতদার-মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত যেমন এই উপন্যাসে ক্রিয়াশীল তেমনি নিম্নবর্গীয় সমাজ, বস্তিবাসী-লুম্পেনও জায়গা করে নিয়েছে উপন্যাসে। রয়েছে প্রলেতারিয়েত সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নভঙ্গও। হাড্ডি খিজির এই সমাজেরই যেন প্রতীক। সমাজে পুলিশের বিরক্তিকর ভূমিকা, বাড়ির কাজের লোক মাতারি, অফিসের ফোর্থ ক্লাস কর্মচারীদের বাড়াবাড়ি, বাংলাদেশের ওয়ার্ক-কালচার —এসবের পাশাপাশি বাঙালি ছোকরার অস্থিতিশীল প্রেম, বস্তিবাসীর জীবনযাত্রা, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে নতুন আইন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতা, গ্রামীণ মানুষের ‘জিন’-এর ভয় ইত্যাদি নানান সামাজিক বিষয় অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পাকিস্তানের অত্যাচারী শাসক আইয়ুব খানের অত্যাচার থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও দেশাত্মবোধ প্রধান হয়ে উঠেছে। শহর জুড়ে মিটিং-মিছিল-স্লোগান, শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি, ছয়দফার অধিকার অর্থাৎ এক স্বাধীন শোষণমুক্ত স্বনির্ভর দেশের আকাঙ্ক্ষা, দেশের জন্য গর্ববোধ উপন্যাসে প্রধান হয়ে উঠেছে৷ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়বার লড়াই-এ আত্মমগ্ন ও মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ ওসমানও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে মিলিটারিদের বিরুদ্ধে রুখে যেতে চেয়েছে। উনিশ শতক ও বিশ শতকের এই দুটি উপন্যাসেই উপন্যাসের প্রধান বিষয় হিসাবে সমাজ চেতনা ও দেশাত্মবোধের যে পরিচয় মেলে তাদের পার্থক্য সামান্যই, উনিশ-বিশ বলা চলে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/July/22/article-17

Page No : 154 -160-

Published In :Volume 2, Issue 3,  July 2022

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License