Published Paper Details:

SWADHINATA PARABARTI BANGLA UPANNYASE SAUTAL SAMAJ O SAMAYER BHINNA SWAR.

HARIPADA HEMBRAM

আদিবাসী সাঁওতাল, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিরোধী, প্রতিবাদী স্বর, কণ্ঠরোধ, অভিঘাত, প্রান্তিক, জাতিগোষ্ঠী

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা উপন্যাসের আখ্যানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমাজ–সংস্কৃতি, সংস্কার–প্রথা, বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুশাসন, সৃষ্টি রহস্য, জন্ম–মৃত্যু–বিবাহের আচার, সমাজ সংগঠনের ক্রিয়া–প্রক্রিয়া, তাদের শোষণ–বঞ্চনার ইতিহাস ও প্রতিবাদ–প্রতিরোধের সামগ্রিক সত্তা ইত্যাদি তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাংলা ঔপন্যাসিকদের অবদান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিশ শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ধরে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও শিল্পনীতির প্রতি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ। এই সময় থেকেই আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের প্রেম কাহিনীর ভাঙাগড়া নিয়ে উপন্যাস লেখার ক্লান্তিকর রাস্তা থেকে সরে এসে আদিবাসীদের মনুষ্যত্বের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে উপন্যাস লেখা শুরু হয় এবং মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির সঙ্গে প্রান্তিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনের প্রচেষ্টা দেখা যায়। মধ্যবিত্ত জীবনের মূল স্রোতে তাদের ফিরিয়ে আনতে মধ্যবিত্তের সহৃদয়তা, দায়িত্ববোধ, আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সমাজ জীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বাঙালি মধ্যবিত্তের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি আদিবাসী চর্চার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।

         আদিবাসী সাহিত্য চর্চার বৃত্তে বিশ শতকের তিরিশের কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে  পঞ্চাশের দশক থেকে আদিবাসী জীবন কেন্দ্রিক রচনার নতুন দিগন্ত উজ্জ্বলতর হয়। পঞ্চাশের দশকে কালীপদ ঘটকের ‘অরণ্য কুহেলী’ (১৯৫০), সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোড়াই চরিত মানস’ (১৯৫১), পাঁচুগোপাল ভাদুড়ির ‘ভাগনাডির মাঠে’ (১৯৫৫) রমাপদ চোধুরীর ‘অরণ্য আদিম’ (১৯৫৭), সুবোধ সরকারের ‘শতকিয়া’ (১৯৫৮)।

         ষাটের দশকে নারায়ন সান্যালে এর ‘দন্ডক শবরী’ (১৯৬১), সমরেশ বসুর ‘দুই অরণ্য’ (১৯৬৩), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অরণ্য বহ্নি’ (১৯৬৬), মহাশ্বেতা দেবীর ‘কবি বন্দ্যঘটি গাড্ডির জীবন ও মৃত্যু’ (১৯৬৭), অপারেশন? বসাই টুডু’, ‘শালগিরার ডাকে’, ‘সিধুকানুর ডাকে’, সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ প্রভৃতি উপন্যাসে আদিবাসী সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর সমাজ জীবন স্পষ্ট করে তুলেছে তাদের বিস্তীর্ণ কাহিনীর পরিসরে। সত্তর ও আশির দশকে আদিবাসী সাহিত্যচর্চার বৃত্ত প্রসারিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঔপন্যাসিকেরা হলেন– আব্দুল জব্বার, শক্তিপদ রাজগুরু, দেবেশ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, সমরেশ মজুমদার, মহাশ্বেতা দেবী, সুধাংশুশেখর চক্রবর্তী প্রমুখ। এদের পর্যবেক্ষণ, ক্ষেত্রানুসন্ধান ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরা পড়েছে আদিবাসী জীবনযাত্রার খুঁটিনাটি দিকগুলি। দারিদ্র‍্য জর্জর কালো মানুষের হাহাকার, প্রতিবাদ–প্রতিরোধ আন্দোলন, সমাজ ও সংস্কৃতি।

         নব্বই এর দশক ও তারপরে বাংলা উপন্যাসের কাহিনীতে আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সমাজজীবনের চিত্র ধরা পড়েছে। এই সমস্ত উপন্যাসগুলি হল ভগীরথ মিশ্রের ‘জানগুরু’ (১৯৯৫), তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মহুলবনীর সেরেঞ’ (১৯৯৫), মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের ‘লালমাটি শালবন’ (১৯৯৭)। একুশ শতকের রচিত উপন্যাসগুলি হলো নলিনী বেরার ‘শাল মহুলের প্রেম’ (২০১১), অভিজিৎ সেনের ‘বহু চন্ডালের হাড়’ (২০১০), গুরুদাস চক্রবর্তীর উপন্যাস ত্রয়ী– ‘অরণ্যে অন্ধকার’ (২০০৯), ‘অরণ্যে পথহারা’ (২০১২), এবং ‘জঙ্গল মহলের রক্তিম সূর্য’ (২০১২) উপন্যাস গুলিতে।

         মূলতঃ স্বাধীনতা পরবর্তীকালের উপন্যাসে আর্থ–সামাজিক, রাজনৈতিক–ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে আদিবাসী সাঁওতালদের সমাজ জীবন চেতনা, তাদের সমাজজীবনের অভিঘাত সমূহ অর্থাৎ শোষণ–পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ–প্রতিরোধী স্বর, সামাজিক বিন্যাসের স্তরে তাদের শ্রেনিবোধ ইত্যাদি ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তুলে ধরা হল।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/July/22/article-20

Page No : 182 -193

Published In :Volume 2, Issue 3,  July 2022

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License