Published Paper Details:
SARALA DEBI CHAUDHURANI SWADESHIKATAR EK MURTA PRATIK : PRASNGA ‘JIBONER JHARAPATA’.
ARABINDA SARAKAR
বন্দেমাতরম্, স্বাদেশিকতা, 'ভারতী' পত্রিকা, বীরাষ্টমী ব্রত, প্রতাপাদিত্য উৎসব, স্বদেশী স্টোরস্, স্বাধীনতা সংগ্রামী
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের এক ব্যতিক্রমী নারী চরিত্র হলেন সরলা দেবী চৌধুরাণী। তিনি এমনই এক ব্যক্তিত্ব, যার দ্যুতি সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের, শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। দেশকে ভিতর থেকে গড়ে তোলার প্রয়াসে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আগ্রহে, নারী জাগরণে, রাষ্ট্রীয় সমস্যা ভাবনা নিয়ে লেখনি চালনায় তাঁর কোনো তুলনা নেই। স্বাধীনচেতা এই নারীর স্বভাব ছিল সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে অন্য সুরে তৈরি। সমাজ ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তাঁর মানসিকতা যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে। সংরূপ হিসাবে এই গ্রন্থ আত্মজীবনী কিন্তু এই গ্রন্থে বাঙালি তথা ভারতীয় নারীর সত্তা বিকাশের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে ধরা পড়েছে। ‘জীবনের ঝরাপাতা’ তাই কেবল ব্যক্তিক কাহিনি নয়, একটি কালের কণ্ঠস্বরও বটে। তাই তাঁর ‘জীবনের ঝরাপাতা’-র প্রতিটি পাতায় ঝরে পড়েছে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, স্বদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অদম্য প্রচেষ্টা। বিভিন্ন কর্মের মধ্য দিয়ে তাঁর স্বদেশচেতনার পরিচয় পাই। সে চেতনা বাইরের কোনো আন্দোলনজনিত নয়, তার উৎস আত্মসচেতনতায়।
সরলাদেবী চৌধুরাণী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে দেশাত্মবোধের তীর্থরেণু মাথায় করে যাত্রা শুরু করলেও, সেখানে পিতা জানকীনাথ ও তাঁর সহকর্মীদের প্রভাব বড় কম ছিল না। আর তারই ভিত্তিভূমিতে ক্রমেই বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ মনীষীদের নানা ভাবাদর্শজনিত স্নেহ সংস্পর্শে গড়ে উঠেছিল তাঁর সমগ্র জীবনের এক স্বকীয় মতবাদ। সরলাদেবী চৌধুরাণী ভারতীয়তার চেতনা থেকেই বুঝে নিয়েছিলেন উপনিবেশের স্বরূপ, অর্থনৈতিক শোষণ, বুঝেছিলেন আমরা যারা আরামে আয়াসে মানুষ তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা একটি ভাবের বিলাসমাত্র। তাই সেই স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রথম থেকেই তিনি উদ্যোগ নেন। সকলকেই স্বাদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের আগেই তিনি 'লক্ষ্মীর ভান্ডার' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে মেয়েদের জন্য স্বদেশী কাপড় বিক্রি করা হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বহু পূর্বেই তিনি, আশুতোষ চৌধুরী ও প্রমথ চৌধুরীর ভাই যোগেশ চৌধুরী এবং সমসাময়িক কিছু মানুষ মিলে 'স্বদেশী স্টোরস' গড়ে তোলেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের মধ্যে স্বাদেশিকতাকে ছড়িয়ে দেওয়া। শুধু তাই নয়, বাঙালি হিসেবে বাঙালির দুর্বল অপবাদ ঘোচাতে যুবকদের অস্ত্র শিক্ষায় ব্রতী করে তোলেন। শুরু করেন প্রতাপাদিত্য উৎসব, উদয়াদিত্য উৎসব কিংবা বীরাষ্টমীর মতো অনুষ্ঠান। এমনকি তাঁর সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকাও শুধু সুকুমার সাহিত্যের রঙ্গভূমি ছিল না, বাহন হয়েছিল স্বাদেশিকতার। বাংলা সাহিত্যে নব দিগন্ত সূচনাকারী এই পত্রিকা তিনি এককভাবে সম্পাদনা করেছিলেন প্রায় ন’বছর (১৩০৬-১৩১৪ বঙ্গাব্দ)। এছাড়াও সমাজসংস্কারক পণ্ডিত রামভুজ দত্ত চৌধুরীর সহযোগিতায় 'হিন্দুস্থান' নামক একটি উর্দু সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন তিনি। এই সাপ্তাহিক ব্রিটিশ বিরোধিতার স্বাক্ষর ছিল। পরাধীন ভারতবর্ষে একটি সুপ্ত জাতিকে জাগ্রত করার জন্য, তার দীর্ঘ সুপ্তোবস্থা মোচনের জন্য, তার অন্তরে সাহস সঞ্চারের জন্য তিনি লিখেছিলেন নানা প্রবন্ধ। ‘শতগান’ নামক জাতীয় সংগীতের সংকলন, ‘নববর্ষের স্বপ্ন’, আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ লিখে স্বদেশী আন্দোলন ও নারী স্বাধীনতার ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। সাহস, বল, বিদ্যা, একতা, স্বাবলম্বন ও স্বায়ত্তশাসন— এই ছয়টি মার্গে নিযুক্ত থেকে দেশসেবা করেছেন এবং নারী মুক্তির পথ দেখিয়েছেন তিনি।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/July/22/article-26
Page No : 231 – 240
Published In :Volume 2, Issue 3, July 2022
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848