Published Paper Details:

TISTA PARER BRITTANTA : EKTI NIMNYA BARGIYA UPAKKHYAN.

DR. SEPHALI MONDAL

তিস্তাপার, নিম্নবর্গীয় মানুষ, সর্বস্ব খোয়ানো, প্রান্তিক, অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর

সাবালটার্ন তারাই যারা চিরন্তন কাল ধরে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নিপীড়িত, বিভিন্নভাবে। তা সে অবহেলিত সামাজিক পরিচিতিতে দরিদ্র হোক, কিংবা নারী। অসহায়তার সুযোগ নেওয়া সুবিধাবাদী সম্প্রদায়ের নিচে সর্বক্ষণে থেকেছে যারা, আজ তারাই নিম্নবর্গের মানুষ বলে পরিচিত হচ্ছে। আবহমান কাল ধরে সমাজে স্থায়ীভাবে থাকা ধনী ও দরিদ্রের মাঝে আরও কত রকমের বর্গ রয়েছে, তাদের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ হয়ে উঠেছে একটি মাইলস্টোন। উপন্যাসটির বৃহৎ আখ্যানে ধরা পড়ে বহু মানুষের কণ্ঠস্বর, তারা সকলেই কোন না কোনভাবে শোষিত, বঞ্চনার শিকার হয়েছে সমাজের ক্ষমতাশালীদের কাছে। তা সে কি জোতাদার গয়নাথ কিংবা পুলিশ, কিংবা মাদারির মা এর সন্তান-দের জন্মদাতা কি ক্ষমতাশালী শাসক, যেই হোক না কেন। বাঘারু, মাদারি, মাদারির মা এই তিস্তাপারের সাধারণ মানুষজন, যারা চাননি তিস্তার জল বাধা পড়ুক, এই প্রকৃতির লীলাঞ্চলের পরিবর্তন হোক। তারা চায়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দয়ার দানে তাদের জীবন বিপন্ন হোক, সেই মানুষের সমবেত কণ্ঠস্বর আখ্যানে উচ্চারিত হয়েছে। ছয় পর্বের বহু বিস্তীর্ণ এই বৃত্তান্তে বাঘারু মাদারিরাই তো তাদের প্রতিনিধি। প্রাকৃতিক জীবনের প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের উপকার করতে আসা সমস্ত শ্রেণিকেই লেখক অন্য দলে ঠেলে দিয়েছেন, বাঘারু যাদের নিজের শরীর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাঘারুর তো নিজস্ব কোনো ভাষা নেই, যা দিয়ে সে প্রত্যাখ্যান করবে দয়ার দান। তাই আখ্যানের শেষে দেখা যায় মাদারিকে সঙ্গে নিয়ে বাঘারু প্রত্যাখ্যান করেছে সমস্ত দয়াকেই।

             তিস্তার পারের সমস্ত মানুষ, যারা এই তিস্তাকে ঘিরে বাঁচে কিংবা বাঁচার চেষ্টায় নিরন্তর লড়াই করে প্রকৃতিকে এক বুক ভালোবাসায় গ্রহণ করে নিয়ে নিজেদের সমিধ খোঁজে; সেই মানুষরা মহাকাব্যপ্রতিম এই উপন্যাসের মূল মেরুদণ্ড। বাঘারু মাদারি এই তিস্তাপারের হাজার হাজারের এক-এক জন, যাদের মায়েরা কোন না কোন দেউনিয়ার অধীনস্থ। তারা এই শ্রেণির মানুষদের কাছেই সন্তানদের জন্ম দেয়, বাঁচে এবং বাঁচার চেষ্টায় সন্তানদের ধরে রাখার চেষ্টা করেও পারে না। বাঘারুর যেমন সর্বস্বের মালিক গয়ানাথ। গয়ানাথের নির্দেশিকাই তার জীবনের সর্বস্ব। গৃহপালিত পশুর চেয়েও খারাপ অবস্থায় থাকে সে কখনও। তবুও বাঘারু বলে বলদ যার বিছন যার, হালুয়া যার, ধান যার, জমি হয় তারই। সে নিমত্ত মাত্র। তার নামের বা কী দরকার। নিঃস্ব বাঘারুর সঙ্গে মাদারির পার্থক্য এতটুকুই যে, অল্প বয়সী হওয়ার জন্য মাদারী এখনো মায়ের কাছে থাকে এবং বাঘারুর মতো তাকে সব কাজে লোকে নেয় না। তাই কাজ খুঁজতে চাওয়া মাদারি খুব দ্রুত টেবিলের মাথা ছাড়িয়ে বড় হতে চায়। এই সমস্ত মানুষের কণ্ঠস্বরকে একটি সুতোই বেঁধে দিয়েছেন দেবেশ রায়। তিস্তা নদীর জল আটকালে যে সুবিধে হয় আমজনতার, সেই সুবিধে এই তিস্তাপারের মানুষেরা আদৌ চায় কি! এই প্রশ্ন উঠে আসে আখ্যানের প্রান্তে। ‘সরকারি সুবিধে’ বাঘারু মাদারির অলীক স্বপ্ন। অরণ্যপ্রকৃতির বনচারী বেশে তাই মাদারিকে সঙ্গে নিয়ে বাঘারু আধুনিক পৃথিবীর সমস্ত সুবিধে প্রত্যাখ্যান করেছে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/July/22/article-33

Page No : 296-304

Published In :Volume 2, Issue 3,  July 2022

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License