Published Paper Details:
MUKUL KHASNOBISER PACH PURUSHER UPAKKHYAN : SAMAY, JIBON O UPALADDHIR MELBANDHAN.
PRANAB KUMAR DAS
সময়, বাঙালি, মুকুল খাসনবিশ, উপন্যাস, সমাজলব্ধ অভিজ্ঞতা, শৈশবের স্মৃতি, ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্য
“কাল-বোধ হল আবশ্যিক (= পূর্বতঃসিদ্ধ), যা সমস্ত অনুভবের অন্তরালে বিদ্যমান। অর্থাৎ কাল (বা কাল-বোধ) হল সমুদয় অনুভবের অপরিহার্য আবশ্যিক শর্ত। কালবোধ বা কাল যে অপরিহার্য ও আবশ্যিক তা এভাবে প্রতিপাদন করা যায় : যা কিছু আমাদের কাছে অবভাসিত হয়, অর্থাৎ আমাদের সমস্ত অনুভব–বাহ্য অনুভব এবং অন্তর অনুভব কালিক সম্বন্ধে (আগে, পরে, একসঙ্গে, এখন, তখন, এপ্রকার সম্বন্ধে) অবভাসিত হয়। কালিক আকারে আকারিত না হয়ে কোন কিছুই আমাদের অনুভবের বিষয় অর্থাৎ অবভাস হতে পারে না।’’১
(সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য : পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস, আগস্ট, ২০১০, পৃ. ৩১৬)
এখানে সময় সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সময় অখণ্ড, তাকে নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলে ভাগ করে দেখা যায় না। সময় নিজস্ব গতিবেগে চলতে থাকে। আমাদের চারপাশে যা ঘটে থাকে, তাকে আমরা নিজেদের সুবিধার্থে ভাগ করে দেখি। জগৎ সৃষ্টির শুরু থেকে যা যা ঘটছে তা অখণ্ড সময়ের অন্তর্ভুক্ত। একজন সাহিত্যিক শুদ্ধ অনুভবের দ্বারা জগতের কোনো ঘটনাকে উপলব্ধির মেলবন্ধনে প্রকাশ করেন। সেই প্রকাশের সঙ্গে সময় ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে থাকে। আবার এই কথাও সত্য ঘটনার হুবহু অনুকরণ তাকে সাময়িক জনপ্রিয়তা দিলেও, পরবর্তীতে তিনি কালের স্রোতে হারিয়ে যাবেন। লেখক সচেতনতভাবে ও শুদ্ধ অনুভবের দ্বারা সময়কে নিয়ে একপ্রকার খেলা করেন। একজন লেখকের সৃজনী শক্তির উপরই নির্ভর করে তিনি কালের ধারায় জয়ী হবেন কি-না? একটি লেখা বা একজন লেখক অখণ্ড সময়কে প্রকাশ করতে পেরেছেন কিনা তার উপর নির্ভর করে তাঁর কালোত্তীর্ণ হবার বিষয়টি।
মুকুল খাসনবিশের ‘পাঁচপুরুষের উপাখ্যান’ পুরোপুরিভাবে জীবন ও সমাজ নির্ভর সৃষ্টি। লেখকের বাস্তব সমাজলব্ধ অভিজ্ঞতা ও সময়জ্ঞান আলোচ্য উপন্যাসে ধরা পড়েছে। লেখক জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি ও অনুশীলন করেছেন বলেই আলোচ্য উপন্যাসে এর প্রভাব পড়েছে। কাহিনি, চরিত্রনির্মাণ, সংস্কৃতি, লোকাচার, খাদ্যাভাস, বাসস্থান ইত্যাদি সব কিছুর মধ্যেই একটা গতিময় পরিচিতি ও বাঙালিয়ানা পরিবেশের মিল রয়েছে। বাঙালিদের সুখ-দুখ, আশা-নিরাশা, ভালোবাসা-ঈর্ষার হুবহু চেনা ছবিটি আলোচ্য উপন্যাসে ধরা পড়েছে। লেখক উপখ্যানের শুরুতে ভূমিকা অংশে নিজেই বলেছেন –
“তবু যে লিখলাম, তার কারণ এই গ্রন্থের কিছুসংখ্যক চরিত্র কাল্পনিক নয়। রক্তমাংসের মানুষ রূপে তারা একসময় এই পৃথিবীতে বর্তমান ছিল। শৈশবে এদের কাহিনী একজন বৃদ্ধা আত্মীয়ার মুখে গল্পকথার মত শুনেছিলাম। যদিও এই কাহিনীর সব কথা বুঝার মত বয়স আমার ছিল না।”
পরবর্তী সময়ে লেখক শৈশবের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে আলোচ্য উপখ্যানটি নির্মাণ করলেন। সেইসঙ্গে তিনি ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্য চর্চার ইতিহাসকে বিশেষত উপন্যাস রচনার ধারাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রয়াস নিয়েছেন এর মাধ্যমে। লেখকের নিজের লেখনীশক্তির উপর বিশ্বাস কম থাকলেও, প্রথম উপন্যাস রচনায় তিনি যে ব্যর্থ হয়েছেন তা বলার সুযোগ নেই। লেখক গল্প বলার ঢঙেই মূল উপাখ্যানটি নির্মাণ করেছেন। তিনি সহজ সরল ভাষায় কাহিনির বিষয়ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মূল কাহিনির পাশাপাশি শাখা কাহিনির বুনুনের দিকেও লেখকের যথেষ্ঠ নজর ছিল। যদিও চরিত্রগুলোর অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের তুলনায় বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। লেখক বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ঘটনাকে সাজালেও কাহিনির অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বটি সঠিকভাবে গুছিয়ে আনতে পারেননি। তবু লেখক অখণ্ড সময়ের কথা মাথায় রেখেই পাঁচপুরুষের জীবনালেখ্য সৃষ্টি করলেন।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/July/22/article-32
Page No : 289- 295
Published In :Volume 2, Issue 3, July 2022
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848