Published Paper Details:
SRISTIR KALAME NARAYAN GANGOPADHYAY.
CHANDRANI HALDAR
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, অধ্যাপনা, সাহিত্য, সৃষ্টি, উপন্যাস, ছোটোগল্প, কিশোর সাহিত্য, জার্নাল, মন্বন্তর, দেশভাগ
উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা- সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী এমন লেখণীধর বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই। রবীন্দ্রনাথকে বাতিঘর স্বরূপ সম্মুখে রেখে যে স্বল্পসংখ্যক সাহিত্যস্রষ্টা এই দুস্তর সমুদ্রে তরী ভাসিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই অপূর্ব রূপবান, সুপুরুষ ব্যক্তিত্ব ও বাগ্মী রাজকীয় ভঙ্গিমায় বাংলা সাহিত্য থেকে বিশ্বসাহিত্যে অবলীলায় বিচরণ করতেন। শিল্পীর সুষমা কথনের বয়ানে, অনায়াস পদ-বিক্ষেপে, কুশলী পরিমিতিবোধে। আবেগ তারল্য যেমন নয়, গুরুভাব গাম্ভীর্যও তেমন নয়, বাঞ্ছনীয় প্রকৃত কলাসাধনায়। আবার ইতিহাস ও সাহিত্যের সুগভীর পাঠ-প্রতিক্রিয়া বক্তব্য ও লেখণীকে কতটা সরস, মায়াবী ও চারুত্বে ভরিয়ে তুলতে পারে তারও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তিনি। অসামান্য স্মৃতিধর, একথা তো বলাই বাহুল্য।
বর্ধিষ্ণু ও শিক্ষিত এক পরিবারে তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালে। স্বদেশ-স্বাধীনতা ও সাহিত্যসাধনা সেই বালক বয়সেই উদ্দীপ্ত করেছিল ভবিষ্যতের কথাশিল্পী, ‘কথাকোবিদ’ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। পূর্ববঙ্গের বরিশালে আদি নিবাস হলেও বাবার চাকরি সূত্রে দিনাজপুরে তাঁর অনেকটা সময় কেটেছে। বাবা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশের দারোগা, তবু তিনি ছিলেন আদর্শবাদী। পড়াশোনার প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ আগ্রহ। বইপড়া ছাড়া অন্য কোনো নেশা তাঁর ছিল না। কিশোর নারায়ণের সাহিত্য প্রেরণার উৎস তিনিই। অতি সংগোপনে বাগান বাড়ির চিলেকোঠায় পাকা কাঁঠালের গন্ধে রসসিক্ত আবহাওয়ায় তাঁর সাহিত্য সাধনার সূত্রপাত। সেই অল্প বয়সেই কল্পনাশক্তির আশ্চর্য বিকাশে মোহময় নেশার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েন। ‘চিত্র-বৈচিত্র্য’ নামে হাতে লেখা পত্রিকার লেখক, সম্পাদক, পাঠক সমস্তই এক নিঃসঙ্গ বালক। তবে নিঃসঙ্গতা পছন্দ করতেন না পরিণত অধ্যাপক। বহু ছাত্রের বৃত্তে আপন ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বলতা নিয়েও মিশে থাকতেই ভালোবাসতেন। কিন্তু লেখকের যে ভিন্নতর নিজের জগৎ চাই-ই চাই। সেই আপন জগৎ-বৃত্তে ডুবে থাকার অভ্যাস এত অল্প বয়সে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই পরিণত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছাত্রদের ভিড়ে সহকর্মী, কবি, শিল্পী, অভিনেতা, লেখকদের আতিথেয়তা অনুরোধ রক্ষা করেও অনায়াসে বাকদেবীর সাধনায় স্বচ্ছন্দ থেকেছেন। মাত্র তিপ্পান্ন বছরের জীবনে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা, সাহিত্য থেকে রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে সমানভাবে অংশ নিয়েও সমসাময়িক যেকোনো লেখকের সঙ্গে সমান তালে লিখে গেছেন।
বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁকে ‘সব্যসাচী’ আখ্যায় অনায়াসে ভূষিত করা যায়। তাঁর নিপুন তুলির টানে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় চিত্রিত হয়েছে নানা স্বাদের গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-কবিতা-নাটক। শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে তো বটেই, পাশাপাশি অধ্যাপনার জগতেও তাঁর ভক্তের সংখ্যা নিতান্ত কিছু কম নয়। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, পবিত্র সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার প্রমুখ প্রতিভাবান শিল্পী-সাহিত্যিক এই সু-বাগ্মী ব্যক্তিত্বকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারেন নি। বিস্ময়-বিমুগ্ধ হয়েছিল সমকালীন ছাত্রমহল থেকে পাঠকমহল। কিন্তু হঠাৎই এই প্রতিভা থমকে দাঁড়ায় ১৯৭০ সালে। সাহিত্যাকাশ থেকে অকালে ঝরে যায় জ্যোতিষ্করূপী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/July/22/article-44
Page No : 400-408
Published In :Volume 2, Issue 3, July 2022
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848