Published Paper Details:

HASAN AZIZUL HUQ ER PRAKRITI CHETANA : PREKKHIT TAR NIRBACHITA CHOTO GALPA.

SAHABUL MONDAL

অবক্ষয়পীড়িত, সামন্ততান্ত্রিক, বেআব্রু, মধ্যবিত্ত, রাঢ়বঙ্গ, শোষকশ্রেণি, হাড়হাভাতে, জীবনধর্ম, জীবনসংগ্রাম, অন্ত্যজশ্রেণি

বাংলা দেশের ছোটগল্পের প্রাঙ্গণে হাসান আজিজুল হক অনন্য ব্যক্তি। বিংশ শতকে ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের যে নবযাত্রা ঘটেছিল তার অন্যতম প্রাণপুরুষ ছিলেন হাসান আজিজুল হক। উত্তাল চল্লিশের দশকের প্রবেশমুখে রাঢ়বঙ্গে জন্ম নেওয়া এই খ্যাতিমান কিংবদন্তীতুল্য কথাশিল্পী দেশে বিদেশে ঈর্ষণীয় আকর্ষণ কেড়েছেন পাঠক-সমালোচকের, অতিক্রম করেছেন একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি। তাঁর হাতে বাংলা ছোটগল্পের বাঁকবদল ঘটেছে –জীবন ও পরিবেশের অভিজ্ঞ রূপভাষ্যকার তিনি। জীবনকে তিনি দেখেছেন সৃষ্টির নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে এক সূত্রে গেঁথে। তাঁর গল্পে উদ্বাস্তু সমস্যা, মধ্যবিত্তের নানামাত্রিক ধ্বস ও জীবনসংগ্রাম, মানুষের অবদমিত যৌন- আকাঙ্ক্ষা, দুর্ভিক্ষের কারণে সৃষ্ট  মৃত্যুর বিভীষিকা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নৃশংসতা,  যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক মন্দা, কালোবাজারির রমরমা ব্যবসা ইত্যাদির ছবি যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় গ্রামীণ মানুষের জীবন ও প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্যময় ছবি। অবিভক্ত বাংলার রাঢ়বঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে তাঁর জন্ম এবং গ্রামেই মানস গঠনের ষোলো বছর অতিক্রম, দেশবিভাগের কারণে স্থানান্তরিত হয়ে বাস্তভিটা ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের খুলনায় বসবাস, বি এল কলেজে তারুণ্যের দুরন্ত কাটানো, অতঃপর উচ্চশিক্ষার্থে এবং চাকুরির সূত্রে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী শহরে স্থায়ী আবাস–এই তিন বঙ্গের ভৌগোলিক অভিজ্ঞতাই হাসানের মানস গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ছোটগল্পের যে প্রাণ, সামান্য কিছুতে অসামান্যের ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলা, তা তাঁর রক্তেই মিশে ছিল। অখিল ক্ষুধা, অফুরান প্রাণচাঞ্চল্য, দুরন্তপনা নিয়ে প্রকৃতিতে চষে বেড়িয়েছেন বালক হাসান, তাকিয়েছেন বিস্ময় ও জিজ্ঞাসার চোখে। বিভূতিভূষণের অপুর মতোই প্রকৃতিই ছিল হাসানের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাঠশালা। বর্ধমানের যবগ্রামে থাকাকালীন সময়ে রাঢ়ের রুক্ষ, ধূসর, খটখটে প্রকৃতির বিবর্ণতা হাসানের চোখে ধরা পড়ে ভয়ানক খেদ ও বাস্তবতা নিয়ে। হাসান আজিজুল হকের জীবনে প্রকৃতির সহজাত সত্তাটি স্নিগ্ধ মধুরতা ও স্বপ্নময়তা নিয়ে ধরা দেয় যখন স্থানান্তরিত হয়ে দক্ষিণ বাংলার খুলনায় আসেন। রাঢ়ের নির্মেদ, রুক্ষ, নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছেলে বিস্ময় বিমূঢ়ের মতো লক্ষ করেন নদী নালা খাল বিল, পাহাড় ও গাছ লতাপাতা নিয়ে দক্ষিণবাংলা সবুজের দেশ, স্বপ্ন ও রূপকথার দেশ। এখানে তাঁর শিল্পীমন ও চোখের তৃষ্ণা মেটাবার অপার সুযোগ। রাঢ়বঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামের সেই জিজ্ঞাসু বালক দক্ষিণবঙ্গের সবুজ প্রকৃতির পাঠ সমাপ্ত করে উত্তরবঙ্গের প্রকৃতির রূপ-রস গ্রহণ করে পরিপুষ্ট ডালপালা বিস্তৃত বটবৃক্ষের মতো বাংলা ছোটগল্পে মহীরূহ হয়ে উঠেছেন। রাঢ়বঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ-উত্তরবঙ্গ এই তিন ভূখন্ডের ত্রিমোহনায় দণ্ডায়মান অপরাজেয় লড়াকু ক্ষত্রিয় হাসান আজিজুল হকের সৃষ্ট চরিত্ররাও প্রায় এই তিন অঞ্চলের ব্রাত্যজন, সাধারণ মানুষ। আর এই জীবনকাব্যের শিরা-উপশিরায় নিরন্তর বহমান প্রকৃতির অমৃত ও গরল। বিভূতিভূষণের মতো শিশুর সরল মন ও সবুজ চশমা চোখে নিয়ে হাসান প্রকৃতির দিকে তাকান নি, বরং তাকিয়েছেন মানিকের মতো নিরেট সাদা ও নিরাসক্ত চোখে। তাঁর গল্পের শরীরের প্রকৃতি আর মানুষ এক অভিন্ন সত্তা, অভিন্ন চরিত্র হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/July/22/article-45

Page No : 409 -416

Published In :Volume 2, Issue 3,  July 2022

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License