Published Paper Details:
ANIL GHARAIYER CHOTO GALPE PRAKRITI O PRANTAJON.
SIMA SUTRADHAR
প্রান্তজন, প্রকৃতি, দারিদ্র্য, অনটন, দুর্যোগ, গরিব, জীবন, মানুষ, জীবিকা।
সমাজের বহুকৌণিক পীড়নে আবহমানকাল ধরে প্রান্তিক মানুষেরা পদপিষ্ট হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আকস্মিক আঘাত সেক্ষেত্রে তাদেরকে আরও এক ধাপ ভাঙনের মুখে এগিয়ে দেয়। প্রকৃতির নিবিড় আশ্রয় তাদেরকে বন্য আদিমতার সঙ্গে সভ্য সমাজের শ্রেণিকাঠামোর বর্বরতা থেকে আড়াল করে রেখেছে যুগান্তরব্যাপী। জীবন ধারণের অকৃত্রিম সৌজন্য শিখিয়েছে তাদেরকে। কিন্তু দারিদ্র্যের সঙ্গে সহবাস করেও প্রকৃতির রুদ্র প্রভাবের কাছে তারা অসহায়। আত্মীয়তার হাতজালেও তাকে বশীভূত করতে পারেনি কখনোই। শুধু নির্যাতিত হওয়ার মানসিক শক্তি ধারণ করে তছনছ হওয়া প্রকৃতির কাছে পুনরায় আশ্রয় চেয়েছে। সামাজিক অভিঘাতের পাশাপাশি প্রকৃতির অসহযোগী স্বভাবের এই ভয়ংকর অভিঘাত প্রান্তজনকে পিছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে বরাবর।
প্রান্তিক মানুষের দুর্ভোগ প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা পালাবদলে। কখনো ঝোড়ো দুর্যোগের আকস্মিক আঘাত, কখনো বা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, কখনো বন্যা পরিস্থিতি, খরা পরিস্থিতি বা অতি বর্ষণের বলীয়ান চেহারা সদা সন্ত্রস্ত করে রাখে প্রান্তিক মানুষজনকে। প্রকৃতির নিষ্ঠুর শাসনে বিপর্যস্ত হয় তাদের জীবন। নষ্ট হয় গরিব মানুষগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। পরাজয়ের ভাব নিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে গরিব মানুষগুলো। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রবলভাবে আহত হয় প্রান্তজনের জীবন ও জীবিকা। ভূমিসংলগ্ন মানুষগুলো প্রকৃতির কাছে আশ্রয় খুঁজে পায় না । ফলে একদিকে ছিন্ন তাদের বাসস্থানের নিরাপত্তা, অন্যদিকে জীবিকার আশ্রয়টুকু। জীবিকার অভাবে অনটনের সর্বগ্রাসী প্রভাব আক্রমণ করে অভাবী মানুষগুলোকে। প্রাকৃতিক পীড়নের ফলে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে তাদের। জীবিকার সন্ধানে মানুষগুলো ক্ষেপা পাগল হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কখনো কখনো প্রয়োজনীয়তা হারায় পুরোনো জীবিকার গুরুত্ব। ফলে প্রান্তজনের জীবনধারণের পক্ষে তৈরি হয় নতুন সংকট। জীবন নির্বাহের দায়ভার গ্রহণ করার জন্য অনেক সময়ই তাদেরকে সরে আসতে হয় নৈতিক স্থাপনার বিন্দু থেকে। জীবনের স্বচ্ছ নীতি থেকে সরে এসে তারা অবক্ষয়ের পথ ধরে হাঁটতে বাধ্য হয়। প্রকৃতির কাছে পরাজিত হয়েও তারা জীবনকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি। পুনরায় মানসিক নির্ভরতার উপর ভর করে উঠে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখেছে। এই জীবন প্রত্যাশার শিকড় সন্ধানে অতি বাস্তব হয়ে আছে প্রান্তিক মানুষেরা। শুধুমাত্র বিষয়বস্তুতে নয়, প্রাকরণিক দিক থেকেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রান্তিক জীবনকে আত্মীকরণ করে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন অনিল ঘড়াই। তাঁর অসংখ্য গল্পের নামকরণে, ভাষা নির্মাণে বা উপমা ব্যবহারে এদের যৌথ ভূমিকা লক্ষণীয়। গল্পের আঙ্গিক গঠনে প্রকৃতি ঘটিত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে প্রান্তজনের জীবনের দুর্ভাগ্যকে রূপায়িত করে তুলেছেন লেখক।
অনিল ঘড়াইয়ের ছোটোগল্পে প্রাকৃতিক বিপর্যয় একটি অন্যতম নিয়ামক শক্তি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অবিন্যস্ত হয়েছে তাদের জীবনীশক্তি। কখনো বা অসংলগ্ন হয়েছে তাদের জীবনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা। প্রকৃতির কাছে পরাজিত মানুষগুলো তবু কখনো কখনো অপরাজেয় হতে চেয়েছে জীবনবোধে, জীবন পরিকল্পনায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আকস্মিক আঘাতে হতদরিদ্র মানুষগুলোর বিপন্ন পরিস্থিতির নানা ঘাত-প্রতিঘাত ধরা পড়েছে অনিল ঘড়াইয়ের বহু ছোটোগল্পে।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ October 22/article-10
Page No : 80-89
Published In :Volume 2, Issue 4
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848