Published Paper Details:
ORIYA KABBYE RABINDRANATH : EKTI ANATIDIRGHA PORIKRAMA.
AVI KOLE
রবীন্দ্রনাথের কাব্য, ওড়িয়া পাঠক, ব্রহ্মবাদী ভাবনা, আধ্যাত্মবোধ, ওড়িয়া সাহিত্যের সবুজযুগ, সবুজের অভিযান, মানব প্রেমের বাণী, সৌন্দর্যপ্রিয়তায় মুগ্ধ, সমন্বয়ের সেতু, কর্মযোগী ঋষিকল্প।
ভারতাত্মার বাণীসাধক কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হিন্দি, মারাঠি, উর্দু, তামিল প্রভৃতি ভাষার সাহিত্যিকেরা রবীন্দ্রসাহিত্যের বিপুল ঐশ্বর্যে মুগ্ধ ও প্রাণীত হয়েছিলেন। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িষ্যার সঙ্গেও কবির সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের। রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রতি উৎসাহ ও কৌতুহল বাড়তে থাকে বিশেষত রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির উত্তর সময় থেকেই। ওড়িষ্যায় রবীন্দ্রসাহিত্যের অন্যান্য শাখা সাফল্য অর্জন করলেও রবীন্দ্র কবিতায় ওড়িষ্যায় সমাধিক পঠিত ও সমাদৃত। ওড়িষ্যা রাজ্যের পান্ডুয়া নামক জমিদারীর কর্তা রূপে রবীন্দ্রনাথ ওড়িষ্যা যাত্রা করেন। ‘সিন্ধুগর্ভ’, ‘সমুদ্র’, ‘সিন্ধুতীরে’ প্রভৃতি কবিতাগুলিতে কবির ওড়িশা বাসের সময়কালে স্থাপত্য- শিল্পকলার পরিচয় বহন করে। ‘উৎকল ব্রাহ্মসমাজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ওড়িয়া সাহিত্যের ভক্ত কবি মধুসূদন রাও এর ‘ঋষিচিত্র’ পত্রিকায় অতীত ভারতের গৌরবময় ঐতিহ্যের পরিচয় পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ১৯১১ সালে তাকে শান্তিনিকেতন আহ্বান করেন ব্রহ্মবাদী মধুসূদনের সঙ্গে ব্রাহ্মবাদী রবীন্দ্রনাথের পরিচয় হয়। ঔপনিষদিক ভাবনা দুই কবিরই কবিতাকে বিশ্বনিয়ন্ত্রা অসীম শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ ও অকপটে সর্বস্ব নিবেদনের সুরধ্বনিত। দুজনের রচনাতে ঈশ্বরের নিকট যে আত্মনিবেদন, আকুলতা এবং গভীর বিশ্বাস পাওয়া যায় যার মূলে ছিল ব্রাহ্মধর্মের প্রতি উভয়ের আন্তরিকতা ও আনুগত্য।
বিশ শতকের সময়কালে দাঁড়িয়ে ওড়িয়া কবিতায় মধ্যযুগের বৈষ্ণবীয় ভাবমন্ডলের আর এক কবি লক্ষীকান্ত মহাপাত্র। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের সঙ্গে আধ্যাত্মবোধের নিরিখে ভাবগত সাদৃশ্য সহজেই চোখে পড়বে কবি লক্ষীকান্তর ‘জীবনসঙ্গীত’ কাব্যগ্রন্থে। যদিও ‘জীবনসঙ্গীত’ অধিক ব্যক্তিনিষ্ঠ। ঝড় ও অন্ধকার রাতে রবীন্দ্রনাথ যেমন অন্তরতমের জন্য অভিসারের অপেক্ষায় অনিদ্র প্রতীক্ষায় থেকেছেন, তেমনই কান্তকবি লক্ষীকান্তও থেকেছেন।
প্রমথ চৌধুরী ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪) পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বলাকা’ (১৯১৬) কাব্যের ১ সংখ্যক কবিতা ‘সবুজের অভিযান’ প্রকাশিত হয়। সমস্ত কিছু জড়তা, সংকীর্ণতা, পুরাতন পন্থা ও গোড়াঁ মনোভাব ত্যাগ করে নব উদ্দামতা প্রাকৃতিক সবুজের মতো সতেজ প্রাণশক্তিকে জেগে ওঠার আহ্বানে অন্নদাশঙ্কর রায় ‘সবুজ সাহিত্য সমিতি’ গঠন করেন ১৯১৯ সালে। কালিন্দীচরণ পানিগ্রাহী, বৈকুণ্ঠনাথ পট্টনায়ক প্রমুখ ওড়িষ্যার তরুণ কবিরা এই দলের প্রধান ভূমিকায় ছিল। মানবিকতাবোধ ও সৌন্দর্যপ্রিয়তা রবীন্দ্রসাহিত্যের এই দুই বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করেছিল সবুজ বন্ধুদের। কালিন্দীচরণ তাঁর দিনলিপিতে রবীন্দ্রনাথের ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘জীবনস্মৃতি’ প্রভৃতি পুস্তক পাঠের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
সীমা ও অসীমের মিলন, মানবপ্রেম, সৌন্দর্যপ্রিয়তা— রবীন্দ্র সাহিত্যের এই গুণগুলি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল ওড়িয়া সাহিত্যের সবুজ যুগের সাধনায় নিমগ্ন কবি মায়াধর মানসিংহকে। তার ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা’, এবং ‘রবীন্দ্রপূজা’— এই তিনটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য অনুশীলনের সূক্ষ্মতা ও মুগ্ধতা প্রকাশিত। প্রগতিবাদী ওড়িয়া কবি সচ্চিদানন্দ রাউত এর সনেট জাতীয় কবিতায় রবীন্দ্র কবিতার অতুল স্পর্শ বেশ বোঝা যায়। উড়িয়া কবি গোপালচন্দ্র মিশ্রের কবিতায় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ করা যায়।
সবমিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রায় তিরিশটি গ্রন্থ আজ পর্যন্ত ওড়িয়ায় অনূদিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ সেই গ্রন্থ যা ওড়িষ্যাবাসীকে ধীরে ধীরে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রতি অনুরাগী করে তুলেছে, পক্ষান্তরে দুই প্রতিবেশী রাজ্যের ভাবজগতের মধ্যে গড়ে ওঠে সে সমন্বয়ের সেতু। ১৯৫০ পরবর্তী ওড়িয়া সাহিত্যে রবীন্দ্র প্রভাব সেই অর্থে দেখা যায় না। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সমস্যা, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট প্রভৃতি কিছু কিছু বিষয় কবিতার বিষয়বস্তুকে প্রভাবিত করেছে। তবুও বলা যায়, ওড়িশায় রবীন্দ্রনাথ আজও শুধু সাহিত্যিক রূপে নয়, কর্মযোগী ঋষিকল্প শুদ্ধ ব্যক্তিত্বরূপে শ্রদ্ধা ও সম্মানের অধিকারী।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ October 22/article-32
Page No : 260-269
Published In :Volume 2, Issue 4
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848