Published Paper Details:
OITIJER NIRMANE TRIPURAR SAMAJ SANGSKRITI : BAHUMATRIK UPOSTHAPON.
DR. ASHOK DAS
বৃহত্তর বাঙালি এক প্রতিভাশালী জাতি। বস্তুত তার প্রতিভা, নিজস্বতা, আভিজাত্যবোধ বিকশিত হয়েছিল, তার ধর্মীয় চিন্তা ধারা, জাতিবিন্যাস সমাজ গঠনের পাশাপাশি সংস্কৃতির স্বক্রীয়তায়। ভিন্ন ভিন্ন বিচার বিশ্লেষণে দেখা গেছে নৃতাত্ত্বিক গঠনের দিক দিয়েও এই প্রতিভাবান জাতি সমগ্র উত্তর ভারতের জাতি সমূহ থেকে পুরোপুরিই আলাদা। এক সময় বাঙালিকে বলা হতো আত্ম-বিকশিত জাতি। সে ভুলে গিয়েছিল, তার প্রাচিন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সেই জন্যই হয়ত বহু বছর পূর্বেই বঙ্কিম আক্ষেপ করে বলেছিলেন বাঙালির নিজস্ব কোন ইতিহাস নেই, আজ আর সে কথা বলার কোন অবকাশ নেই। নানান ব্যক্তিত্ব ও সুধীজনের প্রচেষ্টায় বাংলা ও বাঙালির এক গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছে।
উত্তর পূর্ব ভারতের অন্তসীমায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাজ্যটি হচ্ছে ত্রিপুরা। এ রাজ্যটির উত্তর পূর্বের কিছু অংশ আসামের সঙ্গে সংযোজিত। রাজ্যটির বেশির ভাগ অংশ জুরে আছে প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ যা তার আন্তর্জাতিক সীমানাকে চিহ্নিত করে। যদিও আসাম রাজ্যের সঙ্গে ত্রিপুরার সীমান্ত প্রায় একশ কিলোমিটারের অধিক। প্রাচিন কালে ত্রিপুরার আয়তন আরো বিস্তৃত ছিল। ইংরেজ শাসন ও স্বাধীনতা পরবর্তী দেশভাগ এবং রাজনৈতিক টানাপড়েন রাজ্যটিকে সংকুচিত করেছে। শ্রী কৈলাস চন্দ্র সিংহ প্রণীত ‘রাজমালা’ বা ‘ত্রিপুরার ইতিহাস’ গ্রন্থের শুরুতেই বলেছেন ‘কিরাত ভুমি’ একসময় ‘তৃপুরা’ আখ্যা প্রাপ্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে ‘ত্রীপুরা’ নামে রূপান্তরিত হয়েছে। আর এই ত্রীপুরা শব্দ থেকেই রুপান্তরিত হতে হতে এসেছে ত্রিপুরা শব্দটি। কৈলাস চন্দ্র সিংহ তার প্রাচীন রাজমালার বর্ণনার প্রেক্ষিত এ বলেছেন,
‘‘সমগ্র কুকি (লুছাই) প্রদেশ মনিপুরের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকন্ত পার্বত্য প্রদেশে মধ্য ও দক্ষিণ কাছাড়, শ্রীহট্টের দক্ষিনাংশ, ময়মন সিংহের দক্ষিণ পূর্বাংশ সমগ্র নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলা ত্রিপুরার অন্তর্গত হইতেছে।’’১
স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপুরার সীমা নির্ধারণের মধ্য দিয়েই এটা প্রতিয়মান হচ্ছে যে এই রাজ্যটির মধ্যে বহুভাষিক মানুষের আচার সংস্কার সংযোজিত হয়েছে। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয় ভাবনার অভিনবত্ব অনেক বেশি গভীরে গ্রথিত হয়েছে। উনিবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে ত্রিপুরাকে পার্বত্য ত্রিপুরা বা ‘Hill Tipperah’ বলে বিবেচনা করা হত।
অন্যদিকে আবার ‘রাজমালা’ বা ‘ত্রিপুরার’ ইতিহাস গ্রন্থের প্রনেতা ত্রিপুরার বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি এই রাজ্যটির প্রাকৃতিক বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন,
‘‘ত্রিপুরার রাজ্য একটি পার্বত্য ও অরন্যময় প্রদেশ ইহার মধ্য দিয়ে ৬/৭ পর্বতশ্রেণী উত্তর দক্ষিণে ধাবিত হইয়াছে। একটি হইতে অন্য পর্বত শ্রেণী গড়ে ১০/১২ মাইল দূরে অবস্থিত। পর্বত শ্রেণী সমূহের মধ্যে স্থানে স্থানে সুন্দর সমতল ক্ষেত্র ও জলাভূমি দৃষ্ট হইয়া থাকে। কোন কোন স্থানে কন্ঠক বনের আধিক্য রহিয়াছে।’’২
প্রত্যেকটি মানব সভ্যতা ও তাঁর সংস্কৃতির উৎস অনুসন্ধান রয়ে গেছে ইতিহাসের উৎস পাঠের মধ্যে। অতিত ইতিহাসের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে, সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে এসে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি আজ বর্তমান জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, অতীত কে ছারিয়ে একটি জাতির সংস্কৃতির খোঁজ পাওয়া কঠিন। সভ্যতা ও সংস্কৃতির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে অনেক দীর্ঘ প্রশ্নমালা। যদিও ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এর একটি বাচন আমাদেরকে ভাবিয়ে রাখে।
‘‘কোন ও জাতি বা মানব সমাজের ইতিহাস হইতেছে তাহার সভ্যতার ও সংস্কৃতির ইতিহাস।’’৩
ত্রিপুরা রাজ্যটি পরিধির তুলনায় ক্ষুদ্র হলেও, এর ইতিহাস অত্যন্ত দীর্ঘ ও সুপ্রাচীন। রাজপরিবারের যুদ্ধ বিগ্রহ ও ঘাত প্রতিঘাতের প্রসঙ্গ থাকলেও এই রাজ্যটির সমাজ ও সংস্কৃতির মূলে রয়ে গেছে দীর্ঘ অতীত ইতিহাসের পথ পরিভ্রমন। যে ইতিহাস রাজা মহারাজার কথা বল্লেও, সাধারন মানুষকে বাদ দিয়ে নয়।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ October 22/article-38
Page No : 313-319
Published In :Volume 2, Issue 4
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848