Published Paper Details:
SWADHINATA PARABARTI BANGLA UPONNYASE UNISH SHATAKIYO NARI PORISHAR CHITRAYAN : PRASANGYA ‘KOLKATAR KACHEI’ O ‘PRATHAM PRATISRUTI’.
SHREYASI AICH
নারী, সমাজ, অবরোধ, রক্ষণশীলতা, স্ত্রীশিক্ষা, উপার্জনক্ষমতা, প্রগতি, প্রতিবাদ।
উনিশ শতকে বঙ্গীয় নারীর গতানুগতিক পূর্বপ্রচলিত অবস্থানটিকে নিয়ে নতুনভাবে অনেক চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। স্ত্রী-শিক্ষার জন্য একাধিক পরিকল্পনা ও প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছিল এই সময়ে। সতীদাহ নিবারণ, বিধবা বিবাহ প্রচলন, বহুবিবাহ রদ, সহবাস সম্মতি আইন পাশ – প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নারীকল্যাণ তথা মানবকল্যাণমূলক সমাজ-সংস্কারগুলি ঘটেছিল উনিশ শতকেই। বাংলা সাহিত্যে এই বিষয়গুলি তাদের সামাজিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে বারবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল উনিশ শতকের সমসময় থেকেই। বিশ শতকে ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালেও অতীতকে সাহিত্যে ফিরে দেখার একটা ধারা লক্ষ্য করা যায়। সেই সূত্রে উনিশ শতক স্বাধীনতা-পরবর্তী সাহিত্যে প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট হিসেবে উঠে এসেছে। গজেন্দ্রকুমার মিত্রের ‘কলকাতার কাছেই’ উপন্যাসে উনিশ শতকের শেষলগ্ন এবং আশাপূর্ণা দেবীর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসে উনিশ শতকের শেষার্ধের সময়কাল প্রেক্ষাপটরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও দুটি উপন্যাসই স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রচিত। বর্তমান প্রবন্ধে প্রথমে ‘কলকাতার কাছেই’ এবং তারপর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে উপন্যাসে সামাজিক-পারিবারিক পরিসরে নারীজীবনই প্রবন্ধের মূল বিবেচ্য বিষয়। গজেন্দ্রকুমার মিত্র ও আশাপূর্ণা দেবী- বাংলা সাহিত্যের দুই প্রথিতযশা সাহিত্যিকের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে নির্বাচিত উপন্যাস নিয়ে আলোচনার পূর্বে। গজেন্দ্রকুমার মিত্রের ‘কলকাতার কাছেই’ উপন্যাসের প্রকাশ সংক্রান্ত তথ্যাবলী দেওয়ার পর উপন্যাসে নারী-পরিসর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে রাসমণি, শ্যামাসুন্দরী, উমা প্রমুখ চরিত্রের আলোকে। রাসমণির মধ্যে যেমন একদিকে বৈধব্য সমস্যা, স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়কর্তৃক প্রতারণা, মা হিসেবে সন্তানদের ঢাল হয়ে দাঁড়ানো, অকূল পাথারে ভেসে না গিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সৎপথে থেকে সন্তান মানুষ করা প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এরই সঙ্গে বিবাহিত জীবনের নানা অত্যাচারের ঘটনায় প্রকৃত দোষীকেই তিরস্কার করে এবং অত্যাচারী স্বামীর ঘর করতে মেয়েদের বাধ্য না করে তিনি যথেষ্ট আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। লেখক এই নারীর নির্মাণ কিভাবে করেছেন সেটা আলোচনা করা হয়েছে সঙ্গে আবার নারীর সংস্কারাচ্ছন্নতার দিক নিয়েও যুগপৎ আলোচনা করা হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী এবং উমার মধ্যে একদিকে প্রতিবাদী নারীসত্তাকে লেখক দেখিয়েছেন, অন্যদিক নারী-আত্মার স্বাভাবিক জৈব চাহিদার দিকগুলিও লেখক দক্ষতার সঙ্গে দেখিয়েছেন সূক্ষ্ম মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে। বর্তমান প্রবন্ধে এই বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। সমকালীন সমাজ-পরিসরে দারিদ্র্য ও পুরুষের নানা অকর্মণ্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও জীবনের টানে মেয়েদের লড়াইয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর আশাপূর্ণা দেবীর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাস প্রসঙ্গে পর্যালোচনার পূর্বে লেখিকার জীবন ও সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে খুব সামান্য কিছু কথার উল্লেখ রয়েছে। উনিশ শতকে নারীপ্রগতিমূলক সংস্কারগুলির ক্ষেত্রে সমাজের কিছু মানুষ প্রগতিশীলতার আবার কিছু মানুষ রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসে বৃহৎ সামাজিক পরিসর না দেখানো হলেও সত্যবতী ও তার পিতৃকুল ও শ্বশুরকুলের বিভিন্ন চরিত্রের সমাগমে পারিবারিক নারী-পরিসরেও যেন ওইরকম দুটি প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল শিবির নির্মিত হয়ে গিয়েছিল। বলা বাহুল্য নারী প্রগতিশীলতার দিকে নিজের জীবন দিয়ে অবস্থান করেছিলেন সত্যবতী ও মুষ্টিমেয় কিছু চরিত্র। বর্তমান প্রবন্ধে সেই প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করা হয়েছে। বাংলার মেয়েদের কথা, তাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষার সুযোগ না থাকা, অত্যাচারিত পরাধীন জীবন, পুরুষের অপরাধমূলক দৃষ্টান্ত ইত্যাদি যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনই সত্যবতী নারীচরিত্রটির সৃজন, তাঁর প্রতিবাদের ধরণ, তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রভৃতি আলোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি এ প্রবন্ধে একদিকে রক্ষণশীলতার ও অন্যদিকে নারীমনের অপরাজেয়তার, সংস্কারমুক্তির দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ April23/article-24
Page No : 165-173
Published In :Volume 3, Issue 2
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848