Published Paper Details:
KOLKATAR KOBIGANE SAHITTYA O SAMAJ.
BIJOY HANSDA
কলকাতা, কবিগান, হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর, রাম বসু, নিতাই বৈরাগী, এন্টনি ফিরিঙ্গি
কবিগান হল যুগের ফসল। মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, অন্নদামঙ্গল ও অন্যান্য মঙ্গল কাব্যের ধারা গুলি যখন মানুষের বিনোদন পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, ―ঠিক সেই সময়েই আবার বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের পদধ্বনি শোনা যেতে শুরু করেছে। তখন এই দুয়ের মাঝে কবিগান’ই মানুষের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ইংরেজ শাসিত বড় বড় পরগণা গুলি ভেঙে ছোটো ছোটো পরগণায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ইজারাদাররা জমিদারের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ায় হাতে অভূতপূর্ণ অর্থ এলো। প্রত্যেক ইজারাদারদের নিজস্ব পতিতালয় থাকতো। যার যত বেশি পতিতালয় থাকতো তার সম্মান গৌরব বৃদ্ধি ততই পেত। এই ব্যবসাকে ঘৃণার চোখে দেখা হতনা। প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুরের পতিতালয়ের ব্যবসা ছিল। সন্ধ্যার প্রহরে মানুষের পতিতালয় গমন ও কবিগানের আসর দুই মনোরঞ্জনের উপকরণ হিসেবে দেখা দিল। তথাকথিত বাবু শ্রেণির মানুষ তাদের কাজকর্ম করার পর ক্লান্তি দূর করার জন্য গ্রাম বাংলা থেকে আগত কবিয়ালদের ভাড়া করে নিয়ে যেতে কবিগান শোনাবার জন্য। সারাদিন কায়িক পরিশ্রম করার পর সাধারণ মানুষ জ্ঞানের কথা বা তত্ত্বের কথা শুনতে জানতে চায় না। শুনতে চায় রসের কথা। সাধারণ মানুষ ও বাবু শ্রেণির মানুষ সেই পথের পথিক। কবিয়ালরা কলকাতার বুকে আসর জমাতে শুরু করল, যা থেকে তখন কার সমাজব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র ধরা পড়েছে। অপর দিকে আমরা কবিগানকে কি গীতি কবিতার শ্রেণিতে ফেলতে পারি না? হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, নিতাই বৈরাগী, রাম বসু প্রমুখ কবিয়ালের গানে অসম্ভব রস বৈচিত্র্য ঘটেছে। গানের মধ্য দিয়ে এক ব্যক্তি কবির যে আকুতি এবং এই আকুতি ভীষণ রকম ভাবে মানবিক ও প্রেমবেদনায় সমৃদ্ধ। রাধার যে সম্পূর্ণ আত্মিক অনুবর্তন গীতিকবিতার ভেতরে থাকতো তার কিছু কিছু লক্ষণ কবিগানের মাধ্যমে ধরা পড়েছে। কবিয়ালরা রিপুর বিনোদনে সহায়তা করতে গিয়ে নিজেদের অবয়ব বদল করেছে বারবার। বেঁচে থাকার তাগিদ সংগ্রাম এই সবকিছুর মধ্যে প্রত্যেকটি কবিগানের মধ্যে সাহিত্য নিদর্শন পেতে পারি না। কিছু কিছু গান আছে যেগুলি সত্যিই সাহিত্য পদবাচ্য হবার যোগ্য। কিছু গান আছে সেগুলি শুধুমাত্র গান হিসেবে নয়, শুধুমাত্র পদ হিসেবেও পাঠ করা যেতে পারে। বৈষ্ণব পদাবলি কি বৈষ্ণব রসতত্ত্বের রসাভাস? এই বৈষ্ণব রসতত্ত্ব শুধু কি বৈষ্ণব সমাজ বা সম্প্রদায়ের কথা বলে? না। আসলে ‘দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা’ এই সর্বজনীন সার্বিক অনুভব নিজের করে তারপর সকলের করে নেওয়া। আর এই পদগুলির ব্যক্তি বিশেষ না ধরে তাকে সর্বজনীন করে নেওয়া হলে সকল মানব মানবীর হৃদয় স্পর্শ করবে। যদিও কবিগান নিয়ে সবচেয়ে নির্মম সমালোচনা শোনা গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গলায়। সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীর জননীর হৃদয়ের আরতি, স্বামী ত্যাগিনী বিরহ বিধুরা গৃহবধূর আরতি, হঠাৎ রাজা, জমিদার, বাবুদের চরিত্রের কীর্তিকলাপ― এই সবকিছুকে একত্রিত করে রেখেছে কবিগান।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ April23/article-28
Page No : 204-214
Published In :Volume 3, Issue 2
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848