Published Paper Details:
SATYANARAYAN BRATAKOTHA : MADDHYA YOUGIYO ASAMPRADAYIKOTA.
UJJWAL MONDAL
অর্বাচীন-ব্রতকথা, ব্রতকারগণ, সত্যনারায়ণ-সত্যপীর, হিন্দু-মুসলমান-সম্পর্ক, আপোসমুখী-সাহিত্য, পীর-মাহাত্ম্য গাথা, ধর্মীয় মেরুকরণ, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি, সংকট-সম্ভাবনা-সামঞ্জস্য।
বর্তমান সময়ে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটির প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখেনা। শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ দিনের পর দিন মারাত্মক আকার নিচ্ছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UNO) সেখানে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে আছে। ভারতের প্রধান রাজনৈতিক-দলগুলি সাম্প্রদায়িকতাকেই একমাত্র হাতিয়ার করে এগিয়ে যেতে চাইছে। এ ইতিহাস আজকের নয়, শতাব্দী-প্রাচীন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে তুর্কি-আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক-সম্পর্ক খুব-একটা ভালো ছিলনা। পরে অবশ্য ছবিটা পাল্টায়। শাসকের অত্যাচারের বর্ণনা পাই রামাইপণ্ডিতের ‘শূন্যপুরাণ’, বিদ্যাপতির ‘কীর্তিলতা’, ‘কীর্তিপতাকা’ ইত্যাদি গ্রন্থে। অন্যদিকে হিন্দুধর্মে, সংখ্যাগরিষ্ঠ-নিম্নবর্গ সংখ্যালঘু-উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের অমানবিক অত্যাচারের শিকার ছিল। শাসক ছিল উচ্চবর্ণ। তুর্কি-আক্রমণের ফলে সামাজিক অবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন এল। তখন থেকেই বঙ্গদেশে তুর্ক সিয়া-সম্প্রদায় জায়গা জুড়ে বসেছিল। ইসলাম ধর্মপ্রচারকেরা নতুন একটি বিশ্বাসের জগৎ তৈরি করে দিয়েছিল বঙ্গসমাজের বুকে। সমাজ উপলব্ধি করল হিন্দুদের দেবতা কতখানি নিষ্ক্রিয়, মিথ্যে; মূর্তিপূজা ভণ্ডামির পুতুলমাত্র! তাই শুধুমাত্র ভয়ে নয়, পীর-দরবেশদের উদার-ধর্মীয় প্রচার বিনা-রক্তপাতে বঙ্গদেশের অগণিত মানবহৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। এমতাবস্থায় উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নামমাত্র প্রায়শ্চিত্ত করিয়ে বিধর্মীদের স্বধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ কাছাকাছি আসার সুযোগ পেল। লেখা হল মঙ্গলকাব্য, অনুবাদকাব্য এবং অপ্রধান-পাঁচালীকাব্যসমূহ। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, অনেক মুসলমান লেখকও হিন্দুদের কাব্য-সাহিত্যকে আপন করে নিল। তারাও মঙ্গলকাব্য রচনা করতে উদ্যোগী হল। ইসলামি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য রচনা নসরুল্লার লেখা ‘জঙ্গনামা’। যেখানে মহাভারতের আদলে ইসলাম ধর্মপ্রচারকদের যুদ্ধকাহিনি উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণরাঢ়ের লেখকদের মধ্যে অন্যতম গরিবুলা লিখলেন ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য। সৈয়দ হামজার নামেও মঙ্গলকাব্য আছে। অর্থাৎ ইসলাম-ধর্মাবলম্বীদের মনেও হিন্দুদের দেবমহিমা-সূচক আখ্যান জায়গা করে নিচ্ছিল তাদেরই অজ্ঞাতসারে। এমনকি মুসলমান শাসকেরাও হিন্দুধর্ম ও সাহিত্য বিষয়ে আগ্রহী হয়ে হিন্দু-কবিদের কাব্যরচনা করবার জন্য নির্দেশ দিতে লাগলেন। সনাতন হিন্দুধর্ম ও বহিরাগত ইসলামধর্ম তখন থেকেই সহাবস্থান করতে শুরু করে। চৈতন্যের জীবনীগ্রন্থগুলির মধ্যেও আমরা এই ধর্মীয়-সম্প্রীতির উল্লেখ পাই। ‘সত্যনারায়ণ ব্রতকথা’ও সেই সামাজিক-সম্প্রীতির কথা বলে। যা আজও সাহিত্যপাঠকের নজরে সেভাবে আসেনি। আজও দক্ষিণবঙ্গের ঘরে-ঘরে ‘শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের পাঁচালী’ পাঠ ও সির্ণি খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। ধর্মীয় ভেদাভেদের সীমানা পেরিয়ে চূড়ান্ত মানবিকতার কথা বলেন ভগবান সত্যনারায়ণ ওরফে সত্যপীর। অনেক কবিকেই পাই সত্যনারায়ণ পালার রচয়িতা হিসাবে। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা মধ্যযুগের দুজন প্রতিনিধি-স্থানীয় কবির রচনাকেই গ্রহণ করেছি। তাঁরা হলেন রামেশ্বর ভট্টাচার্য ও ভারতচন্দ্র রায়।
Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL
Paper ID : tirj/ April23/article-29
Page No : 215-227
Published In :Volume 3, Issue 2
DOI (Digital Object Identifier) :
E ISSN : 2583-0848