Published Paper Details:

SWADHINATTAR NIRBACHITA BANGLA UPONNYASE MADDHYABRITTA SHRENIR SWARUP SANDHAN.

MAMPI DEBANGSHI 

স্বাধীনতাত্তোর উপন্যাস, মধ্যবিত্ত, সংকট, শ্রেণিমানসিকতা, যৌথতার ভাঙন, ঘুণধরা দাম্পত্য, স্বার্থপরতা, মূল্যবোধহীনতা, সংশয়, আত্মিক ও বাহ্যিক দ্বন্দ্ব।

বাংলায় মধ্যবিত্তের উত্থান পাশ্চাত্যের শিল্পবিপ্লবের মত পরিবর্তনগর্ভ সামাজিক আলোড়নের মধ্য দিয়ে হয়নি, এ মধ্যবিত্ত মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক ও চাকুরীমুখী। ৪৭-এর স্বাধীনতা সঙ্গে করে নিয়ে এল উদ্বাস্তু সমস্যা, অর্থনৈতিক মন্দা, ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক দিশাহীনতা, মূল্যবোধের ভাঙন। এর প্রভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও বিবর্তন ঘটল; স্বাধীনতাত্তোরপর্বে নানারকম ক্লেদ, বৈষম্য, দ্বিধা, শূন্যতায় মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবন জটিল থেকে জটিলতর ও সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়ল। এই পর্বের নির্বাচিত তিনটি উপন্যাসের মধ্যে মধ্যবিত্তের চারিত্র্য, শ্রেণিমানসিকতা, টিকে থাকার লড়াই, আত্মিক ও বাহ্যিক সংকট তথা স্বরূপের বহুমাত্রিকতা নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠেছে।

 নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘চেনামহল’ এ উঠে এসেছে কলকাতার ভাড়াঘরে তিন প্রজন্ম নিয়ে বাস করা পরিবারের  জোড়াতালি দেওয়া যৌথতার ভাঙনের বাস্তবতা। সেখানে প্রতিটি মানুষ নিজের সুখের কথা ভেবে নিজেদের ছোট ছোট পৃথিবী গড়ে তুলতে চায়। ভাড়াঘরের সরু বারান্দার মত এদের মনগুলোও সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এরা রোজগারে, ফাঁপা মহত্ত্বে, ঝুটো উদারতায় একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে চায়। প্রথাবদ্ধ সংস্কার মানতে পারে না আবার তার বিরুদ্ধে জোর গলায় প্রতিবাদ করতে পারে না। এরা কেউ নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে মরে গিয়ে বাঁচে, কেউবা বাঁচা আর না-বাঁচার মাঝে জীবন্মৃত হয়ে ঝুলে থাকে, এটাই মধ্যবিত্তের ভবিতব্য।

নর-নারীর ঘুণধরা দাম্পত্যের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্তের অন্যতর স্বরূপকে তুলে ধরে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ‘মীরার দুপুর’। পঞ্চাশের দশকের অর্থনৈতিক ভাঙনের মুখে সংসারের হাল ধরতে মেয়েরা বাইরের দুনিয়ায় পা রাখছে, চাকরি করছে এবং তাকে ঘিরে সংস্কারাবদ্ধ মধ্যবিত্ত সমাজে ও মনে নতুন দ্বন্দ্ব-সংকট তৈরি হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ- এলিয়ট পড়া তথাকথিত উন্মুক্তমনা মধ্যবিত্ত বাঙালির মুখোশ খুলে দিয়েছে এই উপন্যাস। পাশাপাশি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারী অসুস্থ জীর্ণ সম্পর্কে সমস্ত কর্তব্যের ফাঁস ঢিলে করে দেবার কথা ভেবেও পিছিয়ে আসে শুধুমাত্র একটি আশঙ্কায়- ‘লোকে কি বলবে’।

আত্মসুখপরায়ণ, স্বার্থসর্বস্ব মধ্যবিত্ত মানুষের বিরুদ্ধে নীরব নালিশ রমাপদ চৌধুরীর ‘খারিজ’। বারোবছর বয়সী চাকর পালানের মৃত্যুকে ঘিরে মধ্যবিত্তের নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধহীন চূড়ান্ত স্বার্থপরতা ও গা-বাঁচানোর মানসিকতাকে পোস্টমর্টেমের মত ফালাফালা করে কেটে দেখা হয়েছে। সংসারে পালানরা আসে-যায়, তাদের মৃত্যুতে দুঃখ করাটা মধ্যবিত্তের কাছে অযথা ‘সেন্টিমেন্ট’। এরা জেনেশুনে অন্যায় করে, পরে নৈতিকতার বেড়া তৈরি করে নিজেই নিজের বিচার করে, অপরাধবোধে ভুগতে থাকে, তারপর সেই অপরাধের দায় সমাজের উপর চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে। পরস্পরবিরোধী দুটো শ্রেণি বিপদে পড়ে নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কীভাবে সমতলে এসে দাঁড়ায়- তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অদ্ভুত এক শ্রেণিমানসিকতা।

উচ্চবিত্তের আছে ধনের নিরাপত্তা, নিম্নবিত্ত পেট চালানোর জন্য কোনো না কোনো উপায় ঠিক বের করে নিতে পারে, এরই মাঝে মধ্যবিত্তের টিকে থাকার লড়াই। আর এই লড়াইকে ঘিরেই মধ্যবিত্তের যাবতীয় জটিলতা, দ্বিধা-দ্বন্ধ, সংশয়, সিদ্ধান্তহীনতা, সংকট। মধ্যবিত্তকে কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় ধরা যায় না, সময়-পরিবেশ-প্রতিবেশের পরিবর্তনে ভাঙা-গড়ায় তার নানা মুখ ভেসে ওঠে, স্বাধীনতাত্তোর এই তিনটি উপন্যাসের মধ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে মধ্যবিত্তের স্বরূপ নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।

Journal : TRISANGAM INTERNATIONAL REFEREED JOURNAL

Paper ID : tirj/ October 22/article-21

Page No : 171-179

Published In :Volume 2, Issue 4

DOI (Digital Object Identifier) : 

E ISSN : 2583-0848

Creative Commons Attribution 4.0 International License